মনিপুর – Kino-Eye – ৪

ইম্ফলের বুকে এমন সরকারি মাদক /নেশা বিরোধী হোর্ডিং প্রচুর চোখে পড়বে – যেন ‘উড়তা পাঞ্জাব’-এর ছবি একদশক আগের

আমরা দেখছিলাম – মনিপুর এর রাজনীতিতে ‘পপি অর্থনীতি’ বা আফিম ব্যবসার কথা উঠলেই সবচেয়ে অস্বস্তিকর মুহূর্তগুলো তৈরী হয়। বার্মা-লাওস-থাইল্যান্ড জুড়ে মাদকের ব্যবসার যে কুখ্যাত ‘সোনালী ত্রিভুজ ‘ – তার সবচেয়ে কাছের মায়নামার ঘেঁষা মনিপুরের ৪০০কিলোমিটারের ‘বিতর্কিত’ সীমান্ত – উরখুল, চান্ডেল, মোরে, চুড়াচাঁদপুর জেলাগুলোয় – পপি চাষের উৎপাদনও হালে অনেক বেড়েছে বলে UNODC (রাষ্ট্রপুঞ্জের ড্রাগ ও অপরাধ সংক্রান্ত দপ্তর )-র রিপোর্ট।

চুড়াচাঁদপুর থেকে ইম্ফল ফিরতে ফিরতে আমাদের মধ্যে কারুর প্রাসঙ্গিকভাবেই মনে পড়তে এখনে’র  মনিপুর তুলনায় এসে গেলো – অতিমারীর ঘরবন্দিতে দেখা কলম্বিয়ার ‘ড্রাগ কার্টেল’কে ঘিরে রক্তক্ষয়ী লড়াই আর দক্ষিণ আমেরিকার রাজনীতিতে ‘ড্রাগ লর্ড’দের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ এর উপরে দেখা একটা ওয়েব সিরিজ ‘নার্কোস’ এর সঙ্গে- কিন্তু আরও জটিল মনিপুর- আফিম অর্থনীতির সাথে জনজাতি বিন্যাসের জটিলতা জড়িয়ে থাকায়।

একটি পোড়া সাইকেল -এমন কত ঘর গেরস্থলী গ্রাম পুড়েছে কুকি -মেইতেই দাঙ্গায়!

আমাদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম মুখোমুখি বসেছিলাম বৃন্দা-র সাথে। নিজের পুলিশের চাকরীর সময়কালে ‘ড্রাগ কার্টেল’ ভাঙতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং এর ঘনিষ্ট এক প্রভাবশালী বিজেপি নেতা তথা ড্রাগ মাফিয়াকে গ্রেফতার করার ‘দুঃসাহস’ দেখিয়েছিলেন – তাই রাজনৈতিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত চাকরি ছাড়তে হয়েছিলো তরুণী আইপিএস থোউনাওজাম বৃন্দাকে। কথা বলতে বসে অদ্ভুত লাগছিলো –  বৃন্দা মনিপুরের চলমান সংঘর্ষকে ‘জাতি দাঙ্গা’ বলে স্বীকার করতে নারাজ! তার কাছে এটা কাঙকোপকি, চুড়াচাঁদপুরের মতো কয়েকটা পার্বত্য জেলায় চিন -কুকিদের চালানো ‘নার্কো-টেররিজম’ বিরুদ্ধে সাধারণ মণিপুরী মানুষের লড়াই। শাসক দল হিসেবে বিজেপি-কে, দুর্নীতিপরায়ণ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে বা চীনের বিরুদ্ধে মায়নামারকে হাতে রাখতে অজিত ডোভাল-এর কুকিদের মদত দেওয়ার যে ‘ছক’- তারই ‘যন্ত্রাংশ’ হিসেবে আসাম রাইফেলসকেও – খোলাখুলি সবাইকেই এই মনিপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য দোষারোপ করছিলেন বৃন্দা – কিন্তু টের পাচ্ছিলাম মেইতেই ‘সংখ্যাগুরু’র বয়ানে কিভাবে মিশে যাচ্ছে তার আফিম-বিরোধী কন্ঠ, কিভাবে দাঙ্গার ব্যাখ্যায় ‘সরকারি ভাষ্য ‘গিলে’ (অ্যাপ্রোপ্রিয়েট করছে বলতে চাইছি) নিচ্ছে আপাতভাবে শর্মিলা চানু-র মতো সরকার বিরোধী জনপ্রিয় ‘প্রতিবাদী’ ইমেজের বৃন্দা-র জ্বালাময়ী বিবৃতি-প্রিয়তা’কে । কিন্তু এর আগে এই স্কেলে, এত ব্যাপক দাঙ্গা মেইতেই আর কুকিদের মধ্যে কখনও তো হয়নি মনিপুরে?- আর (পশ্চিম ইম্ফলের মেইতেই প্রধান ভ্যালি -র বাইরে যে মনিপুর) সীমান্তের জেলাগুলোর যে গুলোতে আফিম চাষ বাড়ার অভিযোগ উঠছে খতিয়ে দেখলে তারমধ্যে সেনাপতি,চুড়াচাঁদপুর, চান্ডেল, কাংকোপকিতেই শুধু কুকিরা সংখ্যায় বেশি, বাকি গুলোতে অধিকাংশ নাগাদের সংখ্যাধিক্য, তাহলে? – ইম্ফলের খ্রিস্টান মেইতেইরা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে এসে অভিযোগ করেন ৩রা মে’র পরের কয়েকদিনে শুধু পশ্চিম ইম্ফলেই প্রায় দু’শোর কাছাকাছি চার্চ পুড়িয়ে দিয়েছে মেইতেই হিন্দুরা -এরই বা কি ব্যাখ্যা দেবেন? – আমাদের প্রশ্নের উত্তর ছিলো না বৃন্দার ‘মেলাতে চাওয়া’ ফর্মুলায় ! – সাম্প্রতিক দাঙ্গায় এটা স্পষ্ট – ‘চিন-কুকি আর ড্রাগ সমার্থক’- এই সমীকরণ এর ‘কনসেনসাস ম্যানুফ্যাকচার’ করতে করতে মনিপুরী মেইতেইরা ইম্ফলের মিডিয়া আর সরকারি কন্ঠস্বর ব্যবহার করে কুকিদের মনিপুর ছাড়া করার যুক্তি সাজাচ্ছে – বাকি ভারতবর্ষের কাছে আর আন্তর্জাতিক মঞ্চেও। ক’দিন আগে নিউইয়র্কে ফরেন রিলেশনস কাউন্সিলে গিয়ে বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর প্রশ্নের মুখে মনিপুর সমস্যার জন্য ‘মিয়ানমার থেকে আসা বহিরাগত’দের দায়ী করেন। দুনিয়াজোড়া চরম ‘দক্ষিণপন্থা’র ঢেউ এ ‘জাতীয়তাবাদ’ নতুন হিড়িক পেয়েছে। সবাই জানে ‘নেটিভ রেসিডেন্ট’ আর ‘বহিরাগত’ শব্দগুলো ভারতবর্ষের রাজনীতিতে কারা এখন সামনে তুলে আনছে – এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই তুলে আনাটাকে শেষ এক দশকে যে কোনও রাজনৈতিক পর্যালোচকই ‘মেজরিটেরিয়ান স্টেট’-এর রোগলক্ষন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে এটা ঠিকই যে এক অর্থে দেখলে, আজকের মনিপুরের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে আন্তর্জাতিক ‘সীমান্ত সমীকরণ’-এর বিষয়টা আলোচনায় এড়িয়ে যাওয়ার কোনও রাস্তাই নেই – পার্বত্য মনিপুরে হিল এরিয়া কাউন্সিল-এর  মায়নামার ঘেঁষা জেলা গুলোতে ‘বহিরাগত’ কুকি -জোমি’দের সংখ্যায় বেড়ে(!) চলার ‘আতঙ্ক’ ইম্ফল ‘ভ্যালি’র সংখ্যাগুরু মেইতেইদের মধ্যে চারিয়ে দেওয়া, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার সংখ্যাগুরু সমর্থনের জমিকে কাজে লাগিয়ে ‘ইনার লাইন পারমিট’ (‘তফশিলি উপজাতিভুক্ত’ নাগা ও কুকিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) চালু করা, পাহাড় ছেড়ে উপত্যকায় ‘আদিবাসী’ কুকি ও নাগাদের বসবাস ও জমি কেনায় লাগাম দিতে রাজ্যে NRC-র পক্ষে মেইতেই অনুমোদন আদায় করা, চিন কুকিদের গায়ে ‘নারকো টেররিস্ট’ ছাপ্ লাগিয়ে মনিপুরের রাজ্য চালানোর সরকারি বাজেট ৩৫ হাজার কোটি আর আফিম ঘিরে অর্থনীতি ৫৫ হাজার কোটির – এ তথ্য ভাসিয়ে দেওয়া, নাগা’দের ‘গ্রেটার নাগালিম’ দাবী আবার মাথাচারা দিয়ে উঠে নাকি সংকুচিত করবে মনিপুরের (যার ‘ভূমিপুত্র’ নাকি একমাত্র মেইতেইরাই !) ভূখন্ড, দানবীয় আইন AFSPA- যার বিরুদ্ধে দশকের পর দশক লড়েছে মনিপুর – সেনা পুলিশের হাতে মনোরমার ধর্ষণ আর আসাম রাইফেলসের

ইম্ফল শহরের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হাওকিপ বা কুকি এলাকা – আড়াল করা হচ্ছিলো আমাদের থেকে। এক মেইতেই খ্রিস্টান বন্ধুর সাহায্যে পৌঁছতে পেরে বুঝলাম কিভাবে মেইতেইরা ‘ডাইনি খোঁজা’ চালিয়েছে

সদর দপ্তরে ‘মেইরা পাইবি’ মহিলাদের নগ্ন ব্যারিকেড কেউ ভোলেনি -সম্প্রতি সেই ‘আফস্পা’ তোলা হলো বেছে বেছে শুধু কিছু মেইতেই-প্রধান এলাকা থেকেই  – কেন? – ইম্ফল উপত্যকা পেরিয়ে পাহাড়ে পা রাখতেই নাগা ও কুকি সম্প্রদায়ের ট্রাইবাল ইউনিটির মঞ্চগুলো থেকে এই প্রশ্নগুলো শুনতে হচ্ছিলো আমাদের CDRO ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমকে যে – কুকিদের তোলা দাবী নিয়ে ‘অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২১’ কে  বাতিল করা হলো কেন? সম্প্রতি প্রত্যাহৃত হয়েছে SOO (সাসপেনশন অফ অপারেশন) চুক্তিও – ২০০৮ সালে যা কুকি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির সাথে লাগু হয়েছিলো পার্বত্য মনিপুরে ‘শান্তি’ফেরাতে, কেন? সংখ্যাগুরু মেইতেইদের জন্য আবার ‘আদিবাসী’ হিসেবে সংরক্ষণ ফিরিয়ে আনতে ৩৭১(সি)ধারা বদলে ফেলার প্রস্তাবিত বিল এখনই এলো কেন? (যা আপাতত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্থগিদ থাকলেও  মনিপুরে মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে  পাকিয়ে তোলা বিদ্বেষের বারুদে সলতে দিলো) -আর এসবেরই পিছনে ডবল ইঞ্জিন সরকার উত্তরপূর্ব সীমান্তে আর মায়ানমারে চীন-এর ‘আগ্রাসন’কে দেখিয়ে চলেছে। ৩রা মে অশান্তি শুরু হয়ে সাড়ে পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে – আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে- এবার বোধহয় মনিপুর ধোঁয়া সরিয়ে চিনতে চাইছে কে আগুন লাগালো। ২০২৪এর ভোট এগিয়ে আসছে – এবার আসরে নামলেন RSS প্রধান মোহন ভাগবৎ -একই সুরে আওড়ালেন সেই ‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভূ-রাজনীতিতে চীনের দখলদারি বাড়ানো’র তত্ব – আর যত ‘কালচারাল মার্ক্সিস্ট’রাই নাকি মনিপুর সম্পর্কে ‘অপ’প্রচার করে অশান্তি জিইয়ে রাখছে! বুঝতে পারছি, আমাদের আগে অ্যানি রাজা, নিশা সিদ্ধু, দীক্ষা দ্বিবেদীদের NFIW (ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান উইমেন) টিম একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং করে মনিপুরে, তারপর ভরতভূষণ, সঞ্জয় কাপুর, সীমা গুহ দের EGI (এডিটরস গিল্ড) – দুটো টিমই কেন তথ্যানুসন্ধান সেরে ফিরে তাদের রিপোর্টে মনিপুরে ঘটে চলা মানবাধিকার লঙ্ঘনে উদ্বেগ জানিয়ে  পক্ষপাতদুষ্ট রাষ্ট্রের/সরকারের ‘ভূমিকা’ (‘state sponsored ‘)-র কথা তুলেছে ! – কেন দুটো টিমের বিরুদ্ধেই পরে মনিপুর পুলিশ FIR করে !

মনিপুর – Kino-Eye – ৪
ইম্ফল ভ্যালি জুড়ে ‘কুকিদের তাড়াও’ আওয়াজ তুলে এমনি সব লেখা ব্যানার আর ফ্লেক্স – দাঙ্গার যুক্তিগুলো কিভাবে সাজানো হয়েছে পড়ে বুঝলাম

ইম্ফলেও কান পাতলে অল্প স্বল্প ‘ব্যোম ব্যোম ভোলে ‘ বাজছে কানে এসেছে – সবাইকে সনাতন ‘ভারত’ এ  সামিল করার তোড়জোড়, ‘২৪ এ ভোট আসছে ! যে প্রশ্ন মনে নিয়ে ফিরেছি – এসবের আড়ালে কি? – কোথা থেকে নজর ঘোরানো হচ্ছে আসলে?

মনিপুর – Kino-Eye – ৪
বিদ্বেষের legitimization! ইম্ফল কুকি শুন্য করতে চলছে ধর্ণা মঞ্চ -কার প্ররোচনায়?

মনিপুরে পার্বত্য জেলা গুলোতে শুধু ভোটের জমি নয় আক্ষরিক অর্থেই কি ‘জমি দখলের’ লড়াই চলছে না ?- ইম্ফল উপত্যকার বাইরে ‘বন আইন’ আর ‘লোকাল কমিউনিটি’র হাতে জঙ্গলের অধিকার’ আইনে পাহাড়ের জঙ্গল জমি থেকে ‘আদিবাসী’ (কুকি ও নাগাদের) উচ্ছেদ করার ‘ক্ষমতা’ ছিলোনা কারুর – এতদিন – কিন্তু সংসদে সংখ্যার জোরে আইন বদলে নেওয়া দেখতে আমরা দেশবাসী ‘অভ্যস্ত’ হচ্ছি – মনিপুরে জঙ্গলের উপর ‘সরকারি নিয়ন্ত্রণ’ নানা অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে – ( উপত্যকার সংখ্যাগুরুর সুবিধায়?) দুর্বল করা হচ্ছে ‘হিল কাউন্সিল’ গুলোকে –  ‘কুকিরা রিজার্ভ ফরেস্ট নষ্ট করছে বন্যপ্রাণের ক্ষতি করছে’ আর ‘চিন-কুকি ‘জঙ্গি’রা অবাধ আফিম চাষে জীব বৈচিত্র ধংস করছে’ এই ‘ন্যারেটিভ’ তৈরী করা হচ্ছে – সরকারি বুলডোজার কুকি গ্রাম ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে -আর কি অদ্ভুত সমাপতন একই সময়ে বাবা রামদেব এর কোম্পানি উত্তরপূর্ব ভারত জুড়ে পাম তেল চাষের জন্য পার্বত্য এলাকায় (মনিপুরেও) আরও বেশি জমি ‘পেয়ে’ চলেছে !

মনিপুর – Kino-Eye – ৪
ইমা বাজারে দেখা একটা পোস্টার। মেইতেইরা মনিপুর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় – তাই এক মনিপুর এক প্রশাসন।
কুমিরা চায় মেইতেই আধিপত্য থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি, আলাদা রাজ্য আলাদা প্রশাসন।

আরেকটা কথা, নাগা -কুকি -মেইতেই প্রায় সব পক্ষের দিক থেকেই এই ক’দিনে মনিপুরে থাকতে বারবার শুনেছি  – ‘মনিপুর খনিজ সম্পদের ভান্ডার’ – ‘মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৩’ এনে যেভাবে বেসরকারি উদ্যোগের হাতে, কর্পোরেটের হাতে খনি খোঁড়ার লাইসেন্স তুলে দেওয়া হচ্ছে তাতে এই ‘মধু ভান্ডের’ লোভ মনিপুরের প্রকৃতি জনবিন্যাস অর্থনীতি অনেক কিছুই চিরতরে বদলে ফেলবে-  কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আছে তাতে আর খুব কিছু আসবে যাবে না – ভারত ‘রাষ্ট্র ‘ তার উত্তর পূর্বের ‘সিস্টার্স’দের ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবে – এটা মনিপুরের মানুষের কাছে আর একদমই ‘আড়াল’ করার জায়গায় নেই!

মনিপুর – Kino-Eye – ৪
ইমা কেইথেল বাজারের বাইরে ঝুলছে ব্যানারটা – এগুলোই যুক্তি মেইতেইদের – এতেই অগ্নিগর্ভ মনিপুর এতদিনের সহভাগীর রক্তে হাত ভেজাচ্ছে

আসলে আমরা মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে স্লোগান তুলতে ভালোবাসি ‘সব কুছ  ইয়াদ রাখখা জায়েগা’ !- কিন্তু স্মৃতিই বিশ্বাসঘাতকতা করে সবচেয়ে বেশি। যখন চতুর ক্ষমতাকাঙ্খী রাজনীতি সব ঘুলিয়ে দেয় -তখন আরও বেশি। যেমন আজ মনিপুরে।

মনিপুর – Kino-Eye – ৪
ইম্ফল উপত্যকা জুড়ে চোখে পড়বে সর্বত্র এই ‘কুকি খেদাও’!

সেদিন একটা সাক্ষাৎকারে তার সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘স্মোক অ্যান্ড অ্যাসেস’ নিয়ে কথা বলতে বসে অমিতাভ ঘোষ বলছিলেন, শুনছিলাম – আফিম যেখানে যাবে এই হিংসা আর উন্মত্ততা ডেকে আনবে – নেশা আর পুঁজির থাবায় ছিন্নভিন্ন করবে কৌম জীবন, স্থানীয় সংস্কৃতি। ঔপনিবেশিক সময়ে একসময় ‘ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির ওপিয়াম দপ্তরে’র নিয়ন্ত্রণ কলকাতার অর্থনীতি চালাতো – আফিমের নিলামে গোলামীর মৌতাত জমাতেন প্রিন্স দ্বারকানাথ, মতিলাল শীল ‘বাবুরা’। আজ মণিপুরে পপি ক্ষেতের দখল নিতে মর্টার শেলিং হচ্ছে – গত দুদশক পাঞ্জাব দেখেছে ‘ওপিয়য়েড ক্রাইসিস’ এর ভয়ঙ্কর অবক্ষয় – অথচ আমরা যেন দেশের  স্বাধীনতার যুদ্ধে ‘অ্যান্টি ওপিয়াম স্ট্রাগল ‘টা ভুলে বসে আছি !

মনিপুরের সর্বত্র নেশা বিরোধী প্রচারের সরকারি হোর্ডিং চোখে পড়ছিলো  –  এই জাতি দাঙ্গার সময়ে ইম্ফল আর ভ্যালিতে তার সাথে জুড়ে যাচ্ছে দেখছিলাম, – কুকি বিদ্বেষী স্লোগান। স্বাধীনতা আগে ব্রিটিশ ও পরে সম্প্রসারণবাদী ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মনিপুরের শিরদাঁড়া সোজা লড়াই-এর ইতিহাস ভোলাতে মনিপুরকে নেশায় ডুবিয়ে দিতে হবে – আফিমের নেশায়, ভাতৃঘাতী দাঙ্গার নেশায় – কখনও নাগা-কুকি কখনও কুকি-মেইতেই ‘ক্রুনি ক্যাপিটালিজম’-এর নতুন নিরীক্ষাগারের নাম তাই মনিপুর – এটাই আজকের মনিপুর -ঠিক এই মুহূর্তে!

আরও পড়ুন – মনিপুর – Kino-Eye

দেখুন – অংশগ্রহণমূলক শিল্প নির্মাণ