যেদিন থেকে দেশের “বাবুরা” মহুয়া’কে “অসভ্য” ঘোষণা করল
সেদিন থেকে আমরাও নিজেদের “অসভ্য” ভাবতে শুরু করলাম।
সেদিন থেকে আমার মা
ভয় পায় মহুয়ার ফুল ছুঁতে,
বাবা ঘৃণা পেতে শুরু করে মহুয়ার নাম কেও।
আমার ভাই উঠোনের তুলসী চারা’কে যত্ন করতে করতে নিজেকে “মার্জিত” ভাবতে শুরু করে,
মহুয়াকে প্রত্যাখ্যান করে সহজেই।
যেদিন থেকে মহামান্য “বাবুরা” আমদের মহুয়া’কে “অসভ্য” ঘোষণা করল
সেদিন থেকে আমরাও নিজেদের অসভ্য ভাবতে শুরু করলাম।
আমরা যারা সহাবস্থানের বিশ্বাসে বেঁচে বর্তে থাকতাম
তারা এখন লজ্জা পাই
আমাদের নদীকে পবিত্র ভাবতে,
পর্বতকে উপাসনা করতে,
পূর্বপুরুষকে অনুসরণ করতে,
এবং মাটিকে “মা” বলে ডাকতে।
এই “অসভ্য” সত্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টায় বারবার আড়াল করছি আত্মপরিচয়।
আজ আমরা হয়ে উঠেছি কেউ খ্রিস্টান,
কেউ হিন্দু, কেউ জৈন অথবা মুসলমান।
যেদিন থেকে তোমরা বাবুরা আমাদের মহুল’কে “অসভ্য” বলে ঘোষণা করলে
আমরাও “অসভ্য” বোধ করা শুরু করলাম।
আমরা যাঁরা বাজারকে ঘৃণা করতাম
তারাই তাকে ডেকে আনলাম ঘরে।
আমাদের হাত থেকে এখন একটা কণাও গলে না
এই “সভ্যতা” আমাদের উপহার দিল স্বার্থপরতা
সবাই “আমি” হয়ে ওঠার পাঠ নিলাম
আমরা বুঝতে শিখলাম “স্ব”
যে ‘স্ব’-এ নেই কোনো সমাজ
আছে শুধুই ব্যক্তি।
আমরা গল্প বুনতাম গানে গানে,
মহাকাব্যকে গড়িয়ে নিতাম নিজেদের ভাষায়…
সে ভাষা ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছে সভ্যতার চাকায়।
এখন আমাদের শিশুরা ইংরেজি শিখছে
তাদের স্বপ্নে গাছ, নদী, পাহাড়ের রূপকথা নেই আর
আছে আমেরিকা লন্ডনের বিলাস আমাদের শিশুরা স্বপ্ন দেখতে ভুলেছে মাটির ভাষায়
যেদিন থেকে বাবুরা আমাদের মহুয়াকে “অসভ্য” বলে দাগিয়ে দিয়েছে
আমরাও ভুলতে বসেছি নিজেদের।