ভেবেছিলাম এই প্রদর্শনের নাম দেবো “কলকাতার গ্যালারি সংস্কৃতিতে মুতি”। তারপর ভাবলাম এই নামও সেই সংস্কৃতির অংশ যে সংস্কৃতি “চটক” আর “চমক” এ বিশ্বাসী। আর আমার মননে এই নামের উদ্ভব শহরে থাকার ফলে মুখোমুখি হওয়া নানান কারণে। কাজটি যাদের সঙ্গে, যেখানে সম্পন্ন হলো তাদের উপর অযথা দুর্বোধ্য একটি ক্ষোভের শিরোনাম চাপিয়ে দেওয়া হবে। তাই বাতিল করলাম নামটি।
যে সমাজ এত বছর ধরে শুনে, গানে গানে, মুখে মুখে, নিজেদের সংস্কৃতি বয়ে নিয়ে চলছে। তাদের উৎসব কেমন, কী তা এই প্রতিবেদনে আমার লেখা উচিত নয় বলেই মনে করছি। এই মনে করার দুটি কারণ, প্রথমত, মাত্র একবার এই পরব কাটিয়ে নিয়মরীতি কেমন, কী কী সে তথ্য লেখা আমার বাড়াবাড়ি বলেই মনে হচ্ছে, ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী। ২য় কারণটি, যে সমাজ শ্রুতি নির্ভর তাকে লিপি নির্ভর করাটা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে আমার প্রবল সন্দেহ। এই সন্দেহ আরও সতেজ হয়েছে এই কাজটি করতে গিয়ে।
তাই, এই সহরায় পরবের মধ্যে সবাই মিলে ছবি দেখার যেই পর্বটি আমরা করলাম, সেই পর্বটির কথাই বলি। সাঁওতাল সমাজে আর সবকিছুর মতোই যে কোনো পরব’ই যৌথতা, প্রকৃতির কাছাকাছি, এই সমস্ত কথাই বলে।
গত বছর বীরভূমের রাজনগর ব্লকের, সুন্দরখেল গ্রামে সহরায় পরবের সময়ে। বন্ধু প্রশান্ত কে, ক্যামেরার অন, অফ, জুম, ফোকাস, এইটুকু অপশন দেখিয়ে দিয়ে এসেছিলাম। ও নিজের মত করে ভিডিও তুলে গেছে ওদের পরবের। ভেবেছিলাম আমরা একসঙ্গে একটি তথ্যচিত্র করবো এই বিষয়ে। ক্যামেরার ব্যাটারির দুর্বলতা, ওর নানান কাজ, আমার নানান কাজের মধ্যে যেটুকু ফুটেজ জড়ো হয়েছিল তা দিয়ে আর হয়ে ওঠেনি।
একবছর পেরিয়ে গেলো। এইবার আবার বাঁদনা পরবের খবর পেয়ে দেখতে বসেছিলাম আগের বছরের ছবি ভিডিওগুলি। দেখতে দেখতে একটা গল্প বলতে ইচ্ছে করলো। কিছু স্টিল ছবি আর ভিডিও থেকে স্ক্রীন শট বের করে সাজিয়ে ফেললাম ছোট্ট একটি গল্প। এই সাজাতে সাজাতে হঠাৎই মনে হলো কদিন আগেই আলাপ হওয়া বন্ধু তপতী’র কথা, বাঁকুড়া থেকে এসে কলকাতায় বিএড পড়ছে এখন। আবদার করলাম গল্পটিকে একটু সাঁওতালিতে লিখে দিবি। হঠাৎ এই আবদারে ওর নিজের কাজ ফেলে আশাকরি বিরক্ত না হয়ে লিখে দিল সাঁওতালি তে। ব্যাস এবার প্রিন্ট। পরেরদিন যাওয়া রাজনগর। সহরায় শুরু।
মাটির দেওয়ালের গায়ে দড়ি বেঁধে, সবাই মিলে ঝুলিয়ে ফেললাম ছবি গুলি। চুপ করে দূরে বসে দেখতে থাকলাম ছবি দেখতে থাকা মুখগুলি, কখনো ছবিতে থাকা ছবির এখনের মুখগুলি। হেসে ফ্যালা, লাজুক হাসি, “ওই যে তুই”, “ওই যে আমি” ছবিতে খুঁজে চলা চললো এই কয়েকদিন।এই দেখতে দেখতে বুঝলাম ছবিতে লেখাগুলি লেখার খুব একটা দরকার ছিল না, শ্রুতি নির্ভর জীবন এখনও লিপিনির্ভর খুব একটা হয়নি। ওরাই বুনে চললো গল্প নিজেদের মতো করে, ছবি দেখতে দেখতে। আমি মননে বুনে চলার চেষ্টা করলাম, আমাদের সব আছে টেক্সট, দর্শন ইত্যাদি ইত্যাদি যা নেই তা যৌথতা। বুনে চললাম যৌথতা, সহভাগী ছবি কথা।
নীচে ছবিগুলির পিডিএফ ডাউনলোডের লিঙ্ক রইলো