বীরভূম জেলার ঝাড়খন্ড ঘেঁষা প্রান্তিক ব্লক রাজনগর। ছোটনাগপুর মালভূমির তরঙ্গ গুলি এসে সমভূমির সাথে মিশছে। রুক্ষ, পাথুরে জঙ্গল ঘেরা এলাকা। অপ্রতুল জলসম্পদ। মালভূমি থেকে সৃষ্টি হয়ে কয়েকটি নদী বয়ে চলেছে ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে। কুশকর্ণী একটি নদী, পশ্চিম প্রান্ত থেকে ব্লকের সব গ্রাম পঞ্চায়েত ছুঁয়ে ময়ূরাক্ষীতে এসে মিশেছে। সুদূর ঐতিহাসিক কাল হতে শাল, খেজুর ছড়ি, সিদ্ধেশ্বরী, ফুল এরকম বেশ কয়েকটি নদী বেঁধে বেঁধে রেখেছে এই ব্লকের জনযাপনকে। রয়েছে কয়েকটি ইতিহাস প্রসিদ্ধ জলাশয়, বড় কালিদহ , ছোট কালিদহ, দেওয়ানী বাঁধ এরকম বেশ কয়েকটি। কালক্রমে এই প্রাকৃতিক সম্বল গুলি কৌলীন্য হারিয়েছে। ক্রমাগত শীর্ণ হয়েছে তাদের কলেবর। জনজীবন থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হয়েছে জলের এই প্রাকৃতিক সম্বলগুলি। যে জলাশয় গুলিকে কেন্দ্র করে একসময় আবর্তিত হয়েছে এই এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনাচরন, তা ক্রমশ আলোচনার পরিসর থেকে দূরে চলে গেছে। বর্তমান প্রজন্ম এই যাপন থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই, পরিচয় হারাতে বসেছে কুশকর্ণী , ফুল, কালিদহ। কুশকর্ণী নদীর অবিরল প্রবাহ কে পুনরুদ্ধার এর দাবী নিয়ে সংগঠিত হয়েছে ‘ কুশকর্ণী নদী সমাজ ‘। তাদের আহ্বানে এলাকার নদী নির্ভর সকল সচেতন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আয়োজিত হয়ে চলেছে নদী যাত্রা, নদী উৎসব। ঐতিহাসিক কাল হতে প্রাকৃতিক সম্বল হিসাবে যে জলাশয়গুলি এলাকাকে প্রাণ শক্তি জুগিয়ে আসছে, সেই জলাশয় গুলির পরিচয় জ্ঞাপক ফলক স্থাপন ও কুশকর্ণী নদীর প্রবাহ কে পুনরুদ্ধার করার দাবী নিয়ে ‘কুশকর্ণী নদী সমাজ’ কিছুদিন আগেই ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিত দাবী জানিয়েছিল। সেই দাবী মেনে রাজনগর ব্লকের পশ্চিম প্রান্ত হতে উল্লেখযোগ্য জলাশয় গুলির পাশে প্রকাশ্য স্থানে পরিচয় জ্ঞাপক ফলক স্থাপন করা শুরু হয়েছে।
বর্তমান তথা ভাবী প্রজন্ম সকলেই চিনে রাখুক এই জলাশয় গুলিকে, যত্নবান হোক এই জলাশয় রক্ষায়। সংগঠনের পক্ষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়েছে রাজনগর ব্লক প্রশাসনকে। তাদের দাবী মতো এই গুরুত্বপূর্ন কাজটি শুরু করার জন্য। সাথে জলাশয় গুলির স্বাস্থ্য রক্ষায় উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সমগ্র এলাকাবাসী উপকৃত হবে। এই দাবী নিয়ে ‘ কুশকর্ণী নদী সমাজ ‘ কথা বলে চলেছে। সকলে মিলে আরো বেশী বেশী জোরালো আওয়াজ তুলে নদীর দাবী নিয়ে, জলাশয়ের দাবী নিয়ে, প্রকৃতি পরিবেশের দাবী নিয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের পক্ষ থেকে।