ধর্ম ও পরিবেশ

গত শনিবার (১৮ই নভেম্বর, ২০২৩) কলকাতার রামমোহন সভাগৃহে গঙ্গা মহাসভা অনুষ্ঠিত হলো। সেখানে শিবানান্দজী এসেছিলেন, ওনার বক্তব্য শুনলাম।

এই মহাসভার আয়োজক নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন।

শ্রোতারা বেশিরভাগই পরিবেশ কর্মী। তাই তারা এক বিশেষ মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই সভায় এসেছিলেন। এনাদের মধ্যে অনেকেই স্বামী সানন্দের (অধ্যাপক জি ডি আগারবালের) সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন। মিছিলে শামিল হয়েছিলেন আত্মবোধানন্দ আর পদ্মাবতীর জন্য। বাকিরা, যাদের সেই অভিজ্ঞতা নেই, তারা শিবানান্দজীদের কাজকর্ম সম্বন্ধে একটা ধারণা পেয়েছেন আমন্ত্রণপত্র থেকে, সেটা এরকম:

আশ্রমের প্রধান স্বামী শিবানন্দ সরস্বতীজী ১৯৯৭ – ১৯৯৮ সালে মাতৃসদন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকেই, কুম্ভক্ষেত্রে পাথর ভাঙার খাদান ও অবৈধ খনন বন্ধ করা, প্লট করে জমি বিক্রি করা এবং গঙ্গা নদী দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করার দাবীতে গুরুজী শিবানন্দ সরস্বতীজী আহ্বান করেন স্বামী গোকুলানন্দ সরস্বতীজিকে ১৯৯৮ সালের মার্চ মাস থেকে অনশন তপস্যা শুরু করার জন্য। পরে গঙ্গাপুত্র স্বামী নিগামানন্দ সরস্বতীজীরও অনশন তপস্যায় যোগ দেন।

সেই শুরু। তারপর এই মাতৃসদন আশ্রম থেকে ৬৭ বার অনশন তপস্যা সংগঠিত করা হয়েছে। অনশন তপস্যা সংগঠিত করা হয়েছে গঙ্গার অবিরলতা ও নির্মলতার দাবীতে। কুম্ভক্ষেত্রে পাথর খাদান ও অবৈধ খনন বন্ধ করার দাবীতে। উত্‍স মুখ থেকে ১২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সমস্ত রকম বাঁধ, জলবিদ্যুত্‍ প্রকল্প বন্ধ করার দাবীতে। গঙ্গা ভক্ত পরিষদ তৈরী করার দাবীতে। গঙ্গা নদীকে রক্ষা করা নিয়ে আইন প্রণয়নের দাবীতে। এবং সর্বোপরি, অনশন তপস্যা সংগঠিত করা হয়েছে ভারতের প্রাকৃতিক সম্বলের উপর কর্পোরেটের মুনাফা লাভের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে

এখনও পর্যন্ত চারজন সন্ন্যাসী গঙ্গার জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন। যাদের মধ্যে তিনজন এই আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা নাগনাথ ২০১৪ সালে বেনারসে অনশন তপস্যার মধ্য দিয়ে আত্মবলিদান করেন। স্বামী গোকুলানন্দজি আত্মবলিদান করেন ১৯৯৯ সালে। স্বামী নিগমানন্দজি আত্মবলিদান করেন ২০১১ সালে। ২০১৮ সালে আত্মবলিদান করেন স্বামী জ্ঞান স্বরূপ সানন্দজি ।

এই সুদীর্ঘ সময়ে গুরুজী শিবানন্দ সরস্বতী বারবার কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, জেলা শাসক, প্রত্যেকের অন্যায় কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ সর্বসমক্ষে জানিয়ে চলেছেন। আইন ব্যাবস্থার উদাসীনতার বিরুদ্ধেও তিনি রয়েছেন মুখর। দেশ জুড়ে কর্পোরেটের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে  এবং অর্থ প্রতিপত্তি লোভী ধর্মের আড়ালে ভন্ড সাধু সন্ন্যাসীদের প্রতি স্পষ্ট ভাবে সোচ্চার হয়েছেন। দেশ জুড়ে ধর্ম পালনের আড়ালে যে মুনাফার বানিজ্য চলছে তা সঠিক ভাবেই দেশবাসীর সামনে মাতৃসদন আশ্রমের তুলে ধরেছেন। এবং মিডিয়া ও প্রশাসনের আড়াল করার শত চেষ্টাতেও তা প্রকাশিত হয়েছে বারেবারে এই মহৎ সন্ন্যাসীদের আত্মবলিদানের মাধ্যমে।

শিবানান্দজী টানা ঘণ্টাখানেক বললেন। তার বক্তব্যে ধর্মের কথা এসেছে। তার বক্তব্যে আধুনিক বিজ্ঞানের কথা এসেছে। ধর্মের কথা আর বিজ্ঞানের কথাকে পাশাপাশি রেখে তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে তাদের কোনো বিরোধ নেই। এবং শুধুই বিরোধ নেই এমন নয়, বহু ক্ষেত্রে তারা একে অপরের অনুপূরক। যেমন তিনি অথর্ববেদ, শ্রীমদ্ভগবদগীতা ও অদ্বৈত বেদান্তের পাশাপাশি আলোচনা করেছেন আধুনিক বিজ্ঞানের ল্য শাতলিয়ে নীতি।

আমরা জানি যে ল্য শাতলিয়ে-র নীতি বলছে:

যখন কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়া একটি রাসায়নিক সাম্যাবস্থায় থাকে, তখন যদি সাময়িকভাবে সেই বিক্রিয়া ব্যবস্থাটির তাপ, চাপ কিংবা এর বিক্রিয়ক বা উৎপাদগুলির ঘনমাত্রার পরিবর্তন করা হয়, তবে সেই পরিবর্তনের প্রত্যুত্তরে ব্যবস্থাটি এমনভাবে উপযোজিত বা পরিবর্তিত হবে যেন সাম্যাবস্থাটি বিপরীত দিকে চালিত হয়ে তাপ, চাপ বা ঘনমাত্রার পরিবর্তনের ফলাফল আংশিকভাবে নাকচ বা প্রশমিত হয়ে নতুন একটি সাম্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

রসায়নশাস্ত্রের আলোচনায় ল্য শাতলিয়ে-র নীতি, যা সাম্যাবস্থা নীতি নামেও পরিচিত, রাসায়নিক সাম্যাবস্থার কোনও নিয়ামকের (তাপ, চাপ, ঘনমাত্রা) পরিবর্তন ঘটালে বিক্রিয়ার পরিণতি কী হবে, তা নির্দেশকারী একটি নীতি। ল্য শাতলিয়ে-র নীতিটি শক্তির সংরক্ষণ সূত্র থেকে উৎসারিত হয়েছে। ফরাসি রসায়নবিদ ও প্রকৌশলী অঁরি ল্য শাতলিয়ে (১৮৫০-১৯৩৬) ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম এই নীতিটি বিবৃত করেন, তাই তার নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে।

(সূত্র: উইকিপিডিয়া)

এদিকে শ্রীমদ্ভগবদগীতার তৃতীয় অধ্যায়ের দশম শ্লোক বলছে:

সহযজ্ঞাঃ প্রজাঃ সৃষ্ট্বা পুরোবাচ প্রজাপতিঃ।

অনেন প্রসবিষ্যধ্বমেষ বোহস্ত্বিষ্টকামধুক্।।

অনুবাদঃ সৃষ্টির প্রারম্ভে সৃষ্টিকর্তা যজ্ঞাদি সহ প্রজাসকল সৃষ্টি করে বলেছিলেন-“এই যজ্ঞের দ্বারা তোমরা উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হও। এই যজ্ঞ তোমাদের সমস্ত অভীষ্ট পূর্ণ করবে।”

তারপর শ্রীমদ্ভগবদগীতার ওই তৃতীয় অধ্যায়ের চতুর্দশ শ্লোক বলছে:

অন্নাদ্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাদন্নসম্ভবঃ।

যজ্ঞাদ্ ভবতি পর্জন্যো যজ্ঞঃ কর্মসমুদ্ভবঃ।।

অনুবাদঃ অন্ন খেয়ে প্রাণীগণ জীবন ধারণ করে। বৃষ্টি হওয়ার ফলে অন্ন উৎপন্ন হয়। যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফলে বৃষ্টি উৎপন্ন হয় এবং শাস্ত্রোক্ত কর্ম থেকে যজ্ঞ উৎপন্ন হয়।

(সূত্র: কৃষ্ণলীলা.ব্লগস্পট.কম)

শিবানান্দজী বলছেন, কি সেই যজ্ঞ যার কথা প্রজাপতি ব্রহ্মা বলছেন?

তার উত্তর আমরা পাই অথর্ববেদের ঊনবিংশ কাণ্ডের প্রথম সুক্তো থেকে।

প্রথম সুক্তো বলছে যে, এই যজ্ঞই আসলে ঈশ্বর। সেই যজ্ঞ করছেন ব্রহ্মা স্বয়ং, যিনি এই জগৎ সৃষ্টি করেছেন। এবং এই যজ্ঞের মাধ্যমে তিনি তার এই সৃষ্ট জগৎকে সচল রেখেছেন।

এবং প্রথম সুক্তোর প্রথম মন্ত্র বলছে:

প্রজাপতি ব্রহ্মার এই যজ্ঞ সচল রাখার জন্য নদীকে তার স্বাভাবিক ছন্দে/ধারায় বইতে দিতে হবে। সেই নদীতে মাছেরা সাঁতার কাটবে নির্বিঘ্নে। নদীর ওপর উন্মুক্ত আকাশে পাখি উড়ে বেড়াবে। মুক্ত বাতাস বইতে হবে। এবং তখনই তার যজ্ঞ সফল হবে। তখন পৃথিবী ফলবতী হবে।

এবং শেষে এই মন্ত্র বলছে যে, এই নদীর বয়ে চলার আওয়াজ, এই বাতাসের শব্দ, এগুলোই ব্রহ্মার কণ্ঠস্বর, এগুলোই তার মন্ত্র উচ্চারণ।

তারপর, ওই সুক্তোর দ্বিতীয় মন্ত্র বলছে:

প্রজাপতি ব্রহ্মা একইসাথে দেবতাগণ ও সমগ্র মানবজাতিকে আহ্বান করছেন, যাতে তার ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে তার এই জীবনদায়ী যজ্ঞকে সচল ও সুরক্ষিত রাখতে ব্রতী হন।

তারপর, ওই সুক্তোর তৃতীয় মন্ত্র বলছে:

বরফাবৃত গিরিশৃঙ্গ থেকে সমুদ্রযাত্রার পথে নদী বহুরূপ ধারণ করে। পথে তার সাথে বহু নদীর সঙ্গম হয়। আবার বহু বহু নদীর জন্ম হয় তার থেকে। তার জলে পূর্ণ হয় জলাশয়, তৃপ্ত হয় পৃথিবী।

এবং শেষে এই মন্ত্র বলছে, নদীর এই প্রকৃতিদত্ত অবিরল, ঐশ্বরিক ধারাই আসলে প্রজাপতি ব্রহ্মার যজ্ঞ। এবং আমাদের জীবন সেই যজ্ঞের ফসল।

শিবানান্দজী বলছেন, এই মন্ত্রদুটি আসলে আমাদের নির্দেশ দিচ্ছে:

১/ নদীকে অবিরল ধারায় বইতে দিতে হবে। সেই আবিরলতা এমনই হতে হবে যাতে সেই নদীতে মাছেরা নির্বিঘ্নে সাঁতার কাটতে পারে, যাতে পাখিরা তার ওপর দিয়ে উড়ে বেড়াতে পারে, জাতে বাতাস বইতে পারে।

২/ আমাদের নদীর প্রতিটি রূপের মহাত্য বুঝতে হবে। বুঝতে হবে যে একটি সুবিশাল নদী যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সেরকমই গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষুদ্র জলাশয় বা পুকুর।

তারপরে তিনি বলছেন, যেহেতু জলকে কেন্দ্র করেই জীবন প্রস্ফুটিত হয়, যেহেতু জলই জীবনের উৎস, তাই জলের প্রতি অবজ্ঞা, অবহেলা ও অভক্তি আমাদের বিনাশ ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।

এবং সেই ইঙ্গিত আমরা পাই অথর্ববেদের ঊনবিংশ কাণ্ডের দ্বিতীয় সুক্তো থেকে।

প্রজাপতি ব্রহ্মার এই জীবনদায়ী যজ্ঞকে সচল রাখার জন্য জলচক্রের প্রতিটি ধাপের সম্পূর্ণতা নিশ্চিত করতে হবে। এবং তা করতে হবে কোনো বাধাবিপত্তি ছাড়া।

শিবানান্দজী এর ব্যাখ্যা করছেন এভাবে:

যে নদী তার উৎস থেকে সঙ্গম অবধি মুক্তধারায় প্রবাহিত হয় সে যেমন আমাদের জীবনে বহু আশীর্বাদ নিয়ে আসে, আবার সেই ধরা যখন বাধাপ্রাপ্ত হয়, তা আমাদের জীবনে নিয়ে আসে বহু অনভিপ্রেত অভিসম্পাত।

শিবানান্দজী অথর্ববেদের এই ব্যাখ্যা পেশ করেন ল্য শাতলিয়ে সাম্যাবস্থার ধারণাকে পাশে রেখে। এবং এই প্রসঙ্গ ধরে তিনি আলোচনা করেন যে, কিভাবে হিমালয়ের বুকে গড়ে ওঠা এরকম অসংখ্য জলবিদ্যুৎপ্রকল্প এই সাম্যাবস্থার ধারণাকে বিপর্যস্ত করছে। কিভাবে এই অগণিত জলবিদ্যুৎপ্রকল্পে সঞ্চিত বিপুল জলরাশি হিমালয়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে নষ্ট করছে। কিভাবে তা ঘন ঘন ডেকে আনছে ভয়ঙ্কর সমস্ত মেঘভাঙ্গাবৃষ্টি, হরপাবান আর ধস।

**

প্রকৃতি পরিবেশ নিয়ে, ধর্ম ও বিজ্ঞানকে  পাশাপাশি রেখে শিবানান্দজীর আলোচনা মোহিত হয়ে শুনলাম। বুঝলাম যে ধর্মের অর্থ তার কাছে কোনোভাবেই রিলিজিয়ন (religion) নয়। তিনি ঋতর কথা বলছেন।

ঋতকে কথ্যভাষায় আমরা বলি রীতি। অর্থাৎ, নিয়ম। বেদে ঋত হচ্ছে বিশ্বপ্রকৃতির নিয়ম, যে নিয়ম মেনে জগৎসংসার পরিচালিত হয়।

বাংলাভাষায় আমরা ধর্মকে ঋত অর্থেও ব্যবহার করি। যেমন আমরা বলি, এটা জলের ধর্ম, বা এটা আগুনের ধর্ম। সেখানে ধর্ম মানে যে রিলিজিয়ন (religion) নয় সেটা বুঝতে আমাদের তেমন কোন অসুবিধা হয়না। এবং অদ্ভুতভাবে ধর্মের এই বিশেষ অর্থ আজকাল বিজ্ঞানের পরিসরেই অধিকতর প্রযোজ্য।

ধর্ম শব্দটি আজকাল আমরা যেভাবে রিলিজিয়ন (religion) অর্থে ব্যবহার করি, তার প্রচলন হয় ঔপনিবেশিক আমল থেকে। যেমন হিন্দুধর্ম শব্দটির অর্থ আজ হিন্দু রিলিজিয়ন (religion)।

এবং ইংরেজ শাসিত ভারতে অমুসলমান সম্প্রদায়ের আপামর জনগোষ্ঠীকে কিভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে চিহ্নিত করা হলো, কিভাবে সেই জনসম্প্রদায় নিজেদের হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিসেবে নির্দ্বিধায় মেনে নিল, তথা হিন্দুধর্মকে তাদের ধর্মীয় (religious) আত্মপরিচয়ের অংশ করে তুললো, তা অবশ্যই তর্কসাপেক্ষ।

তবে একথা বলাই যায় যে আব্রাহামিক পরম্পরায় রিলিজিয়নের যে প্রধান তিনটি শর্ত, যেমন:

১/ রিলিজিয়ন হতে গেলে তার একটি নিজস্ব ঈশ্বর তথা গড (God) থাকতে হবে।

২/ রিলিজিয়ন হতে গেলে তার একটি নিজস্ব বাইবেল (Bible তথা ঈশ্বরের বাণী সংবলিত গ্রন্থ) থাকতে হবে।

৩/ রিলিজিয়ন হতে গেলে তার একটি নিজস্ব চার্চ (Church তথা ঈশ্বরের গৃহ) থাকতে হবে।

এই শর্ত বহু ভারতীয় রিলিজিয়নের ক্ষেত্রে খাটেনা। যেমন, বৌদ্ধধর্ম। সে তো নাস্তিক ধর্ম। অর্থাৎ তার কোনো ঈশ্বর নেই। ধর্ম সেখানে বুদ্ধের কথা, অর্থাৎ, কোনো ঈশ্বরের বাণী নয়, অর্থাৎ তাদের কোনো বাইবেল নেই। আর চার্চের তো প্রশ্নই ওঠেনা। তাই বৌদ্ধধর্ম তথা Buddhism কিভাবে রিলিজিয়ন হয় তা বেশ সমস্যার।

সে আলোচনায় যদি আমরা আপাতত নাও ঢুকি, তবু একথা স্পষ্ট যে শিবানান্দজী যে ধর্মের কথা বলছেন তা কোনো অবস্থাতেই রিলিজিয়নের কথা নয়। তা ঋতর কথা।

এবং তিনি বলছেন যে সেই ধর্মকে লঙ্ঘন করার অর্থ অধর্ম করা। যে অধর্মে লিপ্ত আমাদের দেশের সরকার।

হ্যাঁ, ওই সভায় বলিষ্ঠ গলায় তিনি বললেন যে গঙ্গার উপর এতশত বাঁধ নির্মাণ অধর্ম। এতশত জলবিদ্যুৎপ্রকল্প নির্মাণ অধর্ম। গঙ্গার বুক থেকে বালি ও পাথর খনন অধর্ম। গঙ্গার প্লাবনভূমিতে সব ধরনের নির্মাণ অধর্ম।

**

নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলনের তরফ থেকে আমন্ত্রণপত্রে একথা বলা হয়েছিলো যে:

আমরা যারা নিজেদের নদীকর্মী, পরিবেশ কর্মী, বিজ্ঞান কর্মী বলি তাদের নতুন করে ভেবে দেখার সময় হয়েছে, – গঙ্গা নদী, পর্বত, কুম্ভক্ষেত্র অর্থাত্‍ সার্বিকভাবে পরিবেশের জন্য (মাতৃসদন আশ্রমের) সততা, ত্যাগ, তপস্যা, আত্মবলিদানের এই ধারাকে কি করে ব্যাখ্যা করবো? কী করে অন্তরে চালিত করবো ? এমন ভিন্ন ধারায় বিশ্বাসী মানুষদের সঙ্গে কীভাবে যৌথতা গড়ে তুলে, সার্বিক পরিবেশের জন্য কাজ করা যায়? সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া দরকার। বিশেষ করে যখন আজকের সময়ে সমাজে অসংবেদনশীলতাই প্রধান হয়ে দাঁড়াচ্ছে বারবার।

এর উত্তর আপনারাই ঠিক করবেন। আমি শুধু শিবানান্দজীর সুরে সুর মিলিয়ে নিজের কথাটুকু আপনাদের সামনে রাখলাম।

ধর্মের জয় হোক। জয় হোক শিবানান্দজীর। জয় হোক মাতৃসদন আশ্রমের। জয় হোক পরিবেশ আন্দোলনের।

আরও পড়ুন – গঙ্গা মহাসভা