হারবার জ্যাম

হারবার জ্যাম

মূলত ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতি-পরিবেশকে কেন্দ্র করে সুস্থায়ী জীবনচর্চার খোঁজে এবং প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি আঞ্চলিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্বাধীন শিল্পীদের যুক্ত করে তাঁদের কাজের স্বকীয়তাকে বজায় রেখে বেড়ে উঠতে সহায়তা করার চেষ্টায় ডায়মন্ড হারবারের স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রী, শিল্পী, বিজ্ঞানী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা মিলে গত ২০১৮ সাল থেকে “হারবার জ্যাম” নামক একটা অভিনব উত্‍সবের আয়োজন করেন।

হারবার জ্যাম

এইবারের পঞ্চম বর্ষের দুই দিন ব্যাপী উত্‍সবের প্রথম দিন “জলবায়ু পরিবর্তণ এবং পৃথিবীর ভবিষ্যত্‍” বিষয়ক আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল।  উপস্থিত প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. পূজা রায় জীববৈচিত্র্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তাঁর ছবিসহ উপস্থাপনায় হয়ে যাওয়া ও ঘটতে থাকা বিপদ, প্রাণীদের অবলুপ্তি, ইত্যাদি নিয়ে বিশদ ভাবে আলোচনা করেন।  নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন-এর পক্ষ থেকে নদীকর্মী তাপস দাস বর্তমান সময়ের নিরিখে যখন অপরিকল্পিত ভাবে নদীসৃষ্ট ভূমিরূপের সম্পূর্ণ ধ্বংস সাধন চলছে বাঁধ, ব্যারেজ, জলবিদ্যুত্‍ প্রকল্প তৈরী করার নামে তখন নদী ব্যবহারের ধারনা ও পদ্ধতির দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তণ দরকার সেই বিষয়ে শ্রোতাদের অবহিত করেন।  পরিবেশ কর্মী কল্লোল রায় পরিবেশের বেহাল অবস্থা ও কনফারেন্স অফ পার্টিস (COP) -এর অসারতা নিয়ে বলতে গিয়ে জানান যে আসলে এই জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনগুলি হলো সাধারণ মানুষের টাকায় পিকনিক করার উপলক্ষ্য মাত্র। তাছাড়া উন্নয়ন মানে প্রকৃতি-পরিবেশকে ধ্বংস করে শুধু নির্মাণ ও পণ্য উত্‍পাদন নয় সেকথা উল্লেখ করে ‘de growth’ ও ‘less is more’ -এর পক্ষে সওয়াল করে বলেন বর্তমান সময়ের মূল কাজ হলো কেন্দ্রীয় তথা রাজ্য সরকারগুলিকে এবং নীতিনির্ধারকদের ও প্রশাসকদের বজায় থাকা আইনগুলি মেনে চলতে কিভাবে বাধ্য করা যায় সেই বিষয়ে চিন্তা করা এবং যৌথতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করা।  বরিষ্ঠ সাংবাদিক গৌতম মণ্ডল জলস্তরের বৃদ্ধি ও ডায়মণ্ড হারবার নিয়ে আলোচনায় বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদের কথা তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতে এখানকার মানুষদের নিজভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে এই সতর্কতা মনে রাখতে বলে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে জানান।তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাধারণ মানুষের জীবিকাচ্যুতি ও আর্থিক অনটনের প্রশ্ন আনেন এবং তার ফলেই সুন্দরবনের নাবালিকা বিবাহ ও নারীপাচারের মতন মতন ঘটনা বৃদ্ধির সম্পর্কে শ্রোতাদের অবহিত করেন।  

হারবার জ্যাম

পরিবেশ শিল্পী অধ্যাপক পিনাকী আচার্য্যর গঙ্গা নদীর দূষণ নিয়ে একটি অসাধারণ আর্ট ইনস্টলেশন ছিল এইবারের “হারবার জ্যাম”-এর বিশেষ ভাবনা, যা দেখে মানুষরা দাঁড়িয়ে পড়েছেন, জানতে চেয়েছেন। 

হারবার জ্যাম

একটি কথা না বললেই নয় এবারে ডায়মণ্ড ক্লাব প্রাঙ্গণের মুক্ত পরিবেশে হাতে আঁকা ও ক্যামেরায় তোলা ছবি, প্রাকৃতিক জিনিসের সম্ভারসহ দুর্দান্ত শৈল্পিক আবহে হওয়া “হারবার জ্যাম” একটি উল্লেখ করার মতন বিষয়, যেখানে শীতের প্রারম্ভে স্থানীয় মানুষজন অন্যরকম উত্‍সবে জুড়ে যেতে পারছেন।