একক কায়াকিং অভিযান

নদীর বিপন্নতাই সাধারণ শ্রমজীবি মানুষের জীবনে নানা বিপর্যয় নামিয়ে আনছে।  মানুষ নদী ভাঙনে ঘর ছাড়া, মৎসজীবিরা জীবিকা হারা, কৃষিজীবি মানুষ রেশনের দান ভিক্ষা নিতে বাধ্য হয়েছেন, এই ব্যবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন।  অবিরল-নির্মল নদীর দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠা সময়ের দাবি। 

একক কায়াকিং অভিযান
একক কায়াকিং অভিযান

কায়াকিং-এর মত প্রকৃতি নির্ভর রোমাঞ্চকর খেলার মানুষরাও বাংলা তথা ভারতের প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতাকে এড়িয়ে থাকতে পারছেন না, তাই বারে বারে অন্যান্য নদী-পরিবেশের সংগঠনগুলোর সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী মানুষেরাও যুক্ত হচ্ছেন প্রকৃতি-পরিবেশকে যাতে তার প্রাকৃতিক অবস্থা বজায় রাখা যায় সেই তাগিদে।  এই প্রচেষ্টায় গত ২৯এ নভেম্বর থেকে ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪ দিন ব্যাপী মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের আহিরণ নদী ঘাট থেকে কলকাতার গোয়ালিয়র নদী ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার গঙ্গা নদীর বুকে যে একক কায়াকিং এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় “নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও” প্রচার কর্মসূচির আহ্বান করা হয়েছিল WALK এডভেঞ্চার সংস্থার উদ্যোগে তা গতকাল ১২ই ডিসেম্বর সফল ভাবে শেষ হয়েছে এবং অভিযাত্রী সুদেষ্ণা পাল কর ও তাঁর সাথে থাকা দলের সব সদস্যরা সুস্থ আছেন।   

একক কায়াকিং অভিযান

WALK এডভেঞ্চার সংস্থার ব্যবস্থাপনায় “নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও” বিষয় ভাবনার এই সুদীর্ঘ নদী অভিযানের মুখ্য সহযোগী সংগঠন ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ, নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন এবং মিডিয়া সহযোগী ছিল The De Growth ও Dream Wanderlust। এছাড়াও প্রতিটি জায়গায় জুড়ে থেকে নদী সভা ও প্রচার কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছিলেন জেলাগুলির পরিবেশ, সামাজিক বিষয় এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বহু সংগঠন। 

বন্ধুরা, গতকাল ১২ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার, সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে বারাকপুরের দাসপাড়া নদী ঘাট থেকে শুরু করে সুদেষ্ণা বিকাল ৪টে ১৫ মিনিটে এসে পৌঁছিয়েছেন কলকাতার গোয়ালিয়র নদী ঘাটে।   আসার পথে এ.পি.ডি.আর. পানিহাটী শাখার পক্ষ থেকে অভিযাত্রী সুদেষ্ণা এবং তাঁর সহযাত্রী দলের সদস্যদের পানিহাটী মহোৎসবতলা ঘাটে সংবর্ধনা দেওয়া হয় পাশাপাশি গঙ্গার ঘাটে চূড়ান্ত ভাবে জৈব-অজৈব আবর্জনার দূষণের জন্য পৌরসভার কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে সকলে মতামত দেন।

পরে অভিযাত্রী দলের সকলে খুবই পরিশ্রান্ত ও ক্লান্ত থাকলেও গোয়ালিয়র নদী ঘাটে মনুমেণ্টের পাশের প্রাকৃতিক পরিবেশে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ধরে ছোট করে সমাপ্তি অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়।  নদীসভা শুরু হয় প্রিয় চন্দ্রাদির ‘বাইচের’ গান দিয়ে। “নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও” বিষয় ভাবনার এই অভিযানের মূল সমন্বয়কারী সঞ্জয় দাস জানান এটি একক কায়কিং হলেও আসলে তা যৌথতার ভিত্তিতেই সম্পন্ন হয়েছে; অভিযাত্রী সুদেষ্ণা পাল কর তা সর্বতোভাবে সমর্থন করে বলেন একা কায়াক বাইলেও নৌকায় থাকা জীবন রক্ষাকারী বন্ধুরা সর্বদা তাঁর সঙ্গে থেকেছেন এবং সাহস জুগিয়েছেন। অভিযাত্রী দলের প্রত্যেকের বার্তায় গঙ্গা নদীকে বাঁচাতে হলে যে রাজ্য তথা দেশের ছোট-বড় নদী-খাল-বিল-পুকুর-জলাশয়গুলিকে তাদের প্রাকৃতিক অবস্থা বজায় রাখতেই হবে এবং সরকার, পৌরসভা, পঞ্চায়েত, নীতিনির্ধারকদের আশু চোখে দেখা যায় এমন প্রত্যক্ষ কার্যকারী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং মুনাফা ও আরো মুনাফার লক্ষ্যে চলতে থাকা কর্পোরেট সংস্থাগুলির লোভে রাশ টানতে হবে তা এসপিএসএইচটি স্পষ্ট ভাবে উঠে আসে। এই সভায় “নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও” বিষয়ে তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য, উপলব্ধি, মতামত রাখেন ও পরামর্শ দেন পরিবেশ কর্মী সৌরভ চক্রবর্তী, পরিবেশ যোদ্ধা আশীষ কুমার গাঙ্গুলী, শেখ সোলেমান, বরিষ্ঠ সাংবাদিক প্রসূন আচার্য্য, সাহিত্যিক রাজেশ ধর।

একক কায়াকিং অভিযান
একক কায়াকিং অভিযান
Image Not Found
একক কায়াকিং অভিযান

আজকের নদীসভায় ‘গঙ্গা’ নাটকটি উপস্থাপন করে বারাকপুরের সৌপ্তিক নাট্যসংস্থা, সময়োপযোগী এই নাটক  উপস্থিত এবং পথচলতি মানুষদের দাঁড়িয়ে দেখতে ও ভাবতে উদ্দীপ্ত করে।       

একক কায়াকিং অভিযান

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো “নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও” ভাবনাকে সামনে রেখে গঙ্গা নদীর দূরবস্থা, ভাঙন, বালি তোলার মাফিয়ারাজ, দূষণ এবং নদীর জীববৈচিত্র্য ও নদীর উপর নির্ভরশীল শ্রমজীবি মানুষের অবস্থার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নথিভূক্ত করার জন্য যৌথতার সঙ্গে নদীর বুকে যে ‘একক কায়াকিং’ অভিযানে বন্ধু সুদেষ্ণা জলে নেমেছিলেন তা দেখে সাহিত্যিক, পরিবেশ ও সমাজকর্মী আমাদের সকলের প্রিয় ও ভালোবাসার জলতুতো দিদি তাঁর নামকরণ করেছেন ‘নদীর মেয়ে’ বলে।

সুদীর্ঘ ৪০০ কিলোমিটার এই নদী যাত্রায় অসীম অভিজ্ঞতা বিচক্ষণতা ও সাহস দিয়ে অভিযাত্রী ও দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন সকলের প্রিয় বর্ষীয়ান নৌকার মাঝি শ্রী নিতাই রাজবংশী এবং তার সুযোগ্য উত্তরসূরী কর্মঠ যুবক শ্রী লেখক রাজবংশী।