চুংথাং বাঁধ ভাঙ্গা নিয়ে সিকিমের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। প্রথমে একটা খবর হাওয়ায় ছড়ানো হয়েছিল যে সেনাবাহিনীর প্রচুর বিস্ফোরক লোনাক হ্রদের বেরিয়ে আসা জলে ভেসে এসে বাঁধে ধাক্কা লেগে বিস্ফোরণ ঘটে, তাতে বাঁধ ধ্বংস হয়। পরবর্তীতে বাহিনীর আপত্তিতেই হোক, বা প্রমাণ জোগাড় করার অভাবে সেই মনগড়া তথ্যটা ধামাচাপা পড়ে। এখন বর্তমান সরকার দাবি করছে যে পূর্ববর্তী চামলিং সরকারের আকাশ ছোঁয়া দুর্নীতির কারণে বাঁধ উপযুক্ত ভাবে তৈরি হয়নি। চামলিং-এ দল পাল্টা বলেছে যে এরকম এক ঘটনার তড়িৎ গতিতে মোকাবিলার জন্য বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ঘটনা ও সম্ভাবনা জানা সত্ত্বেও প্রশাসনিক বিভিন্ন মহলকে কোন নির্দেশ দিতে পারেনি, তাই দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য উল্টোপাল্টা প্রচার শুরু করেছে।
দ্বিতীয় বক্তব্যে প্রচ্ছন্নভাবে আছে যে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিলই। অর্থাৎ তিস্তা তে এ ধরনের ব্যাপক জল নেমে আসার প্রবণতাকে কোন বাঁধেরই আটকাবার ক্ষমতা থাকার কথা না। ১৯৫০ বা ১৯৬৮’র জলরাশি ভয়ঙ্কর শব্দ সহ নেমে এসেছিল, তখন কোন বাঁধ ছিল না, তা নদীকে এড়িয়ে পাহাড়ের দুই পাশ থেকে উঠে আসা পোক্ত সেতু ও রেললাইন ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সমতলের জলপাইগুড়ি শহর সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় প্লাবন হয়েছিল। এবার বাঁধের কারণে হয়তো বা নদীর জলরাশির শক্তির অন্য কোন ডায়নামিক্সের কারণে ভয়ঙ্কর জোর শব্দ করে অর্থাৎ স্রোতে নদী বুকের ওপর দিয়েই জল বেরিয়ে গেছে ।(আগামী দিনে এটা একটা চর্চা গবেষণার বিষয় হওয়া উচিত।)
কিন্তু মোদ্দা কথাটা এই যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নদী বাঁধকে যদি আরো হাজার গুণ পোক্ত করে করা হয়, যা সেদিনের মতো জলের শক্তিকে আটকাতে পারে, তাতে দুপাশের পাহাড় এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যার ফলাফল সেই একই দাঁড়াবে, প্রযুক্তির মহিমা প্রচার করতে (সাথে টাকাকড়ির হিসেব গুনতে) এই ধরনের পদক্ষেপ পরিবেশ ও জনস্বার্থ বিরোধী। অথচ পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম সরকার সহ পাহাড়ের জি.টি.এ. ও এন.এইচ.পি.সি.-এর মধ্যে বাঁধ সারাইয়ের কাজ শুরু করা ও পাহাড়ে তথাকথিত গার্ড-ওয়াল দেওয়া নিয়ে একটা বৈঠক গত দুদিন আগে হয়ে গেছে। কাজকর্ম শুরু করার একটা তোড়জোড় চলছে।
আরও পড়ুন – তিস্তা বিপর্যয় – রটনা ও ঘটনা – রূপক মুখার্জী
আরও পড়ুন –
আরও পড়ুন – প্রেস বিজ্ঞপ্তি