গ্রেট ইন্ডিয়ান উৎসবে ক্রেতা হয়ে ওঠার মেজাজে শহরবাসী যখন রাজপথ দখল করেছে। ঠিক সেই সময়ে গতকাল “বিপ্লবী শিক্ষার্থী ঐক্য” ডাক দেয় মাঠ না ছাড়ার, পুঁজিবাদের তৈরী বিপর্যয়ের মুখোশ উম্মোচন করার তাগিদে পথে নামার। সহযোগী হয়ে জুড়ে যায় “নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন”র সাথীরা।
আজ ১৭ অক্টোবর, মঙ্গলবার কলেজ স্ট্রিটে বিকেল ৪টায় জমায়েত করে আন্দোলনকারীরা। মাইক চোঙ এর তীব্রতা কাটিয়ে জায়গা খুঁজতে খুঁজতে বিকেল ৫টায় এমন জায়গা পাওয়া আর সম্ভব নয় বুঝে প্রেসিডেন্সীর গেটের সম্মুখে শুরু হয় পথ সভা। দূষণ পর্ষদ বোধহয় পুজোর ছুটিতে আছেন, প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে লড়াই করে পৌরসভাগুলিও ছুটিতে বোধহয়, সারা শহর রেক্সিন ফ্লেক্স ব্যানারে ছেয়ে আছে।
এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই হ্যান্ড মাইক হাতে ধরে কথা বলা শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা। কথায় উঠে আসে তিস্তা নদীও আমার নদী, তিস্তার পলি আমাদের গড়ে ওঠার পলি। বিপ্লবী শিক্ষার্থী ঐক্যের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিল অনুষ্ণা, অরণি, সৃজন, অনোমিত্র, অনুষ্কা, অন্তরা,যীশু। ওদের কথায় উঠে আসে এই উন্নয়ন পুঁজির উন্নয়ন, জন সাধারণের জন্য নয়। প্রকৃতি বিরুদ্ধ ও প্রকৃতি লুঠের মডেল এটি। পোস্টারে উঠে আসে দেউচা থেকে যশোর রোডের গাছ বাঁচানোর কথাও। নদী বাঁচাও এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিল সৌরভ, ঋত্বিকা। পথসভায় তিনটি দাবী কে সামনে রাখা হয়
এক) অবিলম্বে কত মানুষ এই ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাদের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তাদের পুনর্বাসনের সুষ্ঠু সুস্থ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং তাকে বাস্তবায়িত করতে হবে।
দুই) অবিলম্বে হিমালয় বাঁধ নির্মাণ কে নিষিদ্ধ করতে হবে ও তথাকথিত কংক্রিটের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তিন) আমরা সকলে অবহিত যে ভারতের জলবায়ু, প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীবন প্রবাহ হিমালয়ের দান। সেই হিমালয়কে ধ্বংস করে নদীকে বাঁচানো সম্ভব নয়। নদীর উৎস মূলত হিমালয়ের হিমবাহ আর হিমালয়ের বনাঞ্চল। কিন্তু ভ্রান্ত উন্নয়নের শিকার হিমালয় আর হিমালয়ের উৎপন্ন অসংখ্য নদী-নালা-ঝোরা। মানুষ ও জৈববৈচিত্র্যের সুস্থায়ী মঙ্গলের জন্য হিমালয় নীতি গ্রহণ করা হোক। হিমালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় থাকুক।
এরপর পথসভা শেষ করে কলেজস্ট্রিট চত্বর সহ প্রেসিডেন্সি গেট, কফি হাউজে চলে বাঁধ বিরোধী পোস্টারিং। বাংলাদেশ থেকে ঘুরতে আসা আফজাল ভাইয়ের চোখে পরে এই সমস্ত কার্যকলাপ তিনিও জুড়ে যান গোটা পোস্টারিং কর্মসূচিতে। তিস্তা নিয়ে জানান তার কথা ও বাংলাদেশের সুন্দরবনের উপর নেমে আসা ভয়াবহতার কথা। আফজাল ভাই জানান আজকের কার্যকলাপ দেখে তার ছাত্র জীবনের রাজনৈতিক স্মৃতির কথা। চলতে থাকে দুই বাংলার এক স্বরে নদী ভালবাসার নদী সমস্যার নানান কথা। এইভাবেই মানুষ জুড়ে চলেন। আন্দোলন হয়ে ওঠে প্রতিরোধের উৎসব।
আরও শুনুন তিস্তা বিপর্যয় – রটনা ও ঘটনা – রূপক মুখার্জী
আরও পড়ুন – প্রেস বিজ্ঞপ্তি