টেলিভিশন আর খবরের কাগজের প্রথম পাতা সকালবেলা বুক হিম করে দিলো। ধ্বস্ত তছনছ সিকিম। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে উত্তরাখন্ডের যোশীমঠে দাঁড়িয়ে গত ছ’মাস আগে ঠিক এভাবেই বুক কাঁপছিলো। খবরের হেডলাইন হয়েছিলো ‘Joshimath sinking ‘- ডুবছে যোশীমঠ! ঘর বাড়ি মঠে মন্দিরের দেওয়ালে বড় বড় ফাটল, আতঙ্কে পথে নেমে আসা, আশ্রয় শিবিরে মাথা গোঁজা যোশীমঠের মানুষ সরাসরি আঙ্গুল তুলছিলেন – ‘NTPC ভাগ যাও!’
জলাবিদ্যুৎ প্রকল্প, রেলপথ তৈরী আর চার ধাম সড়ক যোজনা প্রকল্প- ‘উন্নয়ন’ এর নামে পাহাড় আর নদীর উপর লোভের থাবা নামিয়ে আনা! নন্দাদেবী ন্যাশনাল পার্কের যত্রতত্র -অলকানন্দা- ধৌলি আর ঋষিগঙ্গা – চোখের সামনে দেখেছিলাম কিভাবে ডিনামাইট ফাটিয়ে টানেল খুঁড়ে নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে ‘আত্মঘাতী উন্নয়ন’ চলছে! শুধু যোশীমঠ নয় কর্ণপ্রয়াগ, রূদ্রপ্রয়াগ, চামোলি জেলার অন্যত্রও। শান্ত শুয়ে থাকা মন্দাকিনী যেন ঠান্ডা চোখে বলছিলো ‘আবার!’ যোশীমঠ সংঘর্ষ সমিতির অতুল সতী এই বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে আমাদের সাথী হয়েছেন, কলকাতায় এসে বলে গেছেন -‘২০১৩-য় কেদারের ঘটনায় আমাদের শিক্ষা হয়নি, ২০২১ এর রেনি আপদা(বিপর্যয়) সে ভি চেতাবনি মেহসুস নেহি হুয়া ‘!
পাহাড়ের মানুষের অভিজ্ঞতা কে পাত্তা না দিয়ে, স্থানীয় মতামতকে উড়িয়ে সরকারি ‘বিকাশ’ই যে ‘বিনাশ’-এর কারণ, একথা বহুবার বলেও লাভ হয়নি -বলেছিলেন বিপর্যয় বিশেষজ্ঞ রবি চোপড়া।
হরিদ্বারে মাতৃসদন আশ্রমে দাঁড়িয়ে গঙ্গার জন্য ১৯৬দিন অনশন করা তরুণ তাপস আত্মবোধানন্দজী বলেছিলেন -‘গঙ্গা বাঁচানোই আমার ধর্ম ‘!
মেঘলা মুষরে থাকা ভোরে একথাগুলোই ফোনে ফোনে একে অন্যকে বলছিলাম আমরা – নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও এর বন্ধুরা।
দেখছিলাম ‘যোশীমঠ -শেষের শুরু’ তথ্যচিত্রের জন্য তুলে আনা ছবি, ভিডিও।
ঠিক একই সঙ্গে মনে হচ্ছিলো, যোশীমঠে যা NTPC করছে সিকিম আর পশ্চিমবঙ্গে সেই একই কাজ করছে NHPC – আমাদের সাথী সিকিমের সুকপে থেকেও আরও প্রত্যন্তে থাকা মায়ালমিৎ লেপচা-র The De Growth এর জন্য দেওয়া সাক্ষাৎকার(সুকপে অঞ্চলের ধ্বস সম্পর্কিত সাক্ষাৎকার) এর সাবধানবানী। ওদের সংগঠন অ্যাফেক্টেড সিটিজেনস অফ তিস্তা (ACT ) বারবার সবাইকে জানিয়েছে ‘অ-দূরদর্শী উন্নয়ন’ (বাঁধ নির্মাণ) তিস্তা আর তিস্তা পাড়ের জীবনে কি বিপদ ঘনিয়ে আনছে !
আমরা বলেছিলাম। সবার আগে ‘লাইভ আর এক্সক্লুসিভ’ ছবি তুলে ধরেছিলাম -এই হাস্যকর কথা গুলোর কোনও মানে হয়না!- কিন্তু উত্তরাখন্ড থেকে উত্তরবঙ্গ যে ‘অনেক দুর’ নয় – এ অনুভূতিটাই ভাগ করে নিতে চাইছিলাম সবার সাথে। ‘ক্লাউড বার্স্ট ‘-এ নজর ঘুরিয়ে লাভ নেই আঙ্গুল তুলতে হবে ‘উন্নয়ন’ এর নির্মাণ প্রকল্পের দিকে! ‘বাঁধ’ দেওয়া দরকার লোভে, না হলে তিস্তার বুকে আরও অনেক বাঁধ ভেসে যাবে অচিরেই।
ফিচার ছবি সংগৃহীত