আজকাল কোনও তথ্যানুসন্ধান জাতীয় কাজে সাংগঠনিক দায়িত্বসহ গেলে নিজের মোবাইল ফোনটা সাক্ষাৎকার রেকর্ডিং আর ছবি তোলায় যথেচ্ছ ব্যবহার করি – আমরা সবাই। তার নির্যাস নিয়ে পূর্ণাঙ্গ সাংগঠনিক রিপোর্ট অনতিবিলম্বে প্রকাশিত হয়, এবারও হবে। পড়ে থাকে ডিজিটাল ওয়েস্ট – গিগা ছাপিয়ে টেরা ভর্তি। মনিপুর থেকে ফিরে – এ শুধু ফিরে ফোন থেকে হার্ড ডিস্কে নামিয়ে সাজিয়ে (ইনডেক্সিং করে) রাখতে রাখতে ছবি গুলো বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া – এর মধ্যেই আমার দেখা জানা বোঝা টুকুর গন্ধরাজ না গন্ধগোকুল- সে তো থাকবেই। এত বিচার সভা দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায় আর এত নানা পক্ষে ভেঙে যাওয়া – এত ইনফরমেশন ‘অনেকান্ত’ ইন্টারপ্রিটেশন-এর পরিসর বাড়িয়ে চলেছে বেশ বুঝি । অন্তত এই ভেবে শুরু করছি যে ব্যাখ্যা জুড়ে ভার বাড়াবো না – শুধু তথ্যের মতো উঠে আসা ছবি সাজিয়ে রাখা।
আমারই দেশের উত্তর পূর্ব। জ্বলছে গত প্রায় চার মাস জনজাতি সংঘর্ষে । কতখানি দিল্লি মুখী খোপে ঢুকে আমার চিন্তা – যে সর্বভারতীয় ডেইলি পড়ি তার কোন কোনায় কবে সরে গেছে মনিপুর এর খবর খেয়ালও করিনি চাঁদে চলো’র চক্করে আর জি -২০ ধামাকায়। ‘নগ্ন প্যারেড’ এর ভিডিও ভাইরাল হলে মনে পড়ে আমাদের – কি ভালোবাসায় নাম রেখেছিলাম ‘সেভেন সিস্টার্স’! টের পেলাম কেন্দ্র কতখানি প্রান্তিকতা দেয় ম্যাপের ‘কোনা’ কে -কিন্তু এতে একটুও লজ্জিত হলাম কি?
‘আপাতত শান্তিকল্যাণ – পেটের কাছে উঁচিয়ে আছো ছুরি কাজেই এখন স্বাধীনমতো ঘুরি এখন সবই শান্ত, সবই ভালো’ (শঙ্খ ঘোষ) –
দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর চার মাস কেটে গেছে তারপর গেছি। আপাত নিঃস্পৃহতার আড়াল সরলেই যে অবিশ্বাস সন্দেহ আর হিংস্রতার আঁচ পাচ্ছিলাম -তাতে এতটাই মুহ্যমান ছিলাম যে ছবি তোলার সময় ফ্রেম আর কম্পোজিশানে নান্দনিকতা রাখার কথা ভাবাও একরকম অশ্লীলতা মনে হয়েছে। তাই কিছুই না -শুধু কয়েকটা ছবি। মুহূর্ত ধরেছি কিন্তু অনিবার্য ডিজিটাল বর্জের জঞ্জাল স্তুপে হারিয়ে যাক – তাও চাই মন থেকে- বিস্মৃতির শুন্য গর্ভে এই হিংস্র সময়ের সঙ্গেই।
মণিপুরে মানে ইম্ফলে নেমেই দেখেছিলাম এই সরকারি নির্দেশ সেঁটে আছে যত্রতত্র দেওয়ালে।সঙ্গের ছবিটি ইমা কাইথেল বাজারের একটি থাম্বার গায়ে। কিন্তু এমন নিরীহ আদেশ মোটেই কাগুজে মাত্র নয়। নিষেধের তর্জনী ভাঙতে সামরিক বাহিনীর রাইফেলের নলের মুখোমুখি হয়েছে মনিপুর বারবার। সাম্প্রতিক অতীতেও বারবার। এই ছবি আমার মনে থাকবে ‘দেওয়ালের কান ‘ নামে
(*যে আন্তরিক অভিনিবেশে আর পেশাগত দক্ষতায় তিনি ‘গুজরাত ফাইলস’ এর মতো মারাত্মক ঝুঁকির কাজটি করেছিলেন – সাংবাদিক রানা আয়ুব কে- এদেশের একজন সামান্য মানবাধিকার কর্মী হিসেবে মন চাইলো কোনও ভাবে কুর্নিশ জানাতে। ‘গুজরাত ফাইলস’ বইয়ের মুখবন্ধে ওঁরই ব্যবহার করা মিলান কুন্দেরার পঙ্গতিটি পড়লাম -” ক্ষমতার বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম হচ্ছে বিস্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতির সংগ্রাম। “)। প্রসংগত ১৯৪৯-এ সর্দার বল্লভ ভাই স্বাধীন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তৎকালীন স্বাধীন মনিপুর রাজ্যের রাজা প্রিয়ব্রত সিংকে বাধ্য করেন ভারত ইউনিয়ন এর সংযুক্তি চুক্তিতে যোগ দিতে।দিল্লি ভুলে গেছে, মনিপুর ভোলেনি।সর্দার প্যাটেলের আকাশ ছোঁয়া মূর্তি বসিয়ে তাকে ‘লৌহ পুরুষ’ মানে আজকের ভারতের শাসক শক্তি-এক পরিচয় পত্র,এক ভোট, এক জাতি, এক হিন্দুস্তান – ভারত আজ ‘একীকরণ’-এ খুব জোর দিয়েছে -তাই সর্দার প্যাটেল আবার উঁচুতে উঠেছেন!কাংলেইপাক (মনিপুর) বিস্মৃতির বিরুদ্ধে লড়ে এসেছে, শাসকের বিরুদ্ধেও – দেখে এলাম জল আপাতত একটু ঘোলা, কিন্তু কেটে যাবে!