এবার ড: রাজেন্দ্র প্রসাদও জালিয়াত – উত্তরপ্রদেশ সরকার

ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড: রাজেন্দ্র প্রসাদও জালিয়াত বা প্রতারক। এই কথা বলা যায় ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে এসে। শুধু ডা: রাজেন্দ্র প্রসাদ নন, আচার্য বিনোবা ভাবে, লোক নায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ, লালবাহাদুর শাস্ত্রী। একই সারিতে। পশ্চিমবঙ্গে কথাগুলো কিছুটা বিস্ময় তৈরি করলেও উত্তরপ্রদেশে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠেছে।

হ্যাঁ এমনটাই প্রচার বেনারসে ঘটে চলেছে বিগত কয়েক মাস ধরে। যার সূত্রপাত গত ১১ই এপ্রিল ২০২৩ এ উত্তর রেলওয়ের লখনৌয়ের পক্ষ থেকে বারানসী জেলার ডেপুটি কালেক্টর ‘সর্ব সেবা সংঘের‘ বিরুদ্ধে একটি মামলার রুজু করে। এই মামলায় বলা হয় ১৯০৭, ১৯৬১ এবং ১৯৭০ সালে রেলওয়ে থেকে ‘সর্ব সেবা সংঘ’ কর্তৃক কেনা জমির নথি জালিয়াতি করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে এটি একটি অপরাধ মূলক কাজ। এরপর গত ১৫ ই মে ২০২৩ বারানসী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টিস্ট এর কর্মকর্তারা বিরাট পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে ‘গান্ধী বিদ্যা সংস্থানে’র ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তাদের প্রশ্ন করলে জানা যায়, সংস্থানের গ্রন্থাগার, প্রশাসনিক ভবন ইত্যাদি বিভাগীয় কমিশনের নির্দেশে ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টস কে দেওয়া হয়েছে। যদিও কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সর্ব সেবা সংঘ কে এর কোন লিখিত প্রতিলিপি দেওয়া হয়নি।

এরপর ১৫ ই মে থেকে সারা ভারতেই গান্ধী জন ও ‘গান্ধী জেপি বিরাসত বাঁচাও সংঘ সমিতি’র ডাকে ক্যাম্পাসে সত্যাগ্রহের ডাক দেওয়া হয়। রেলওয়ে ও উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের  ন্যাক্কারজনক এই আচরণের প্রতিবাদে দেশ জুড়ে ধর্না, সত্যাগ্রহ, পদযাত্রা, অনশন, প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান শুরু হয়। প্রতিবাদ যখন তীব্র আকার ধারণ করছে সেই সময় সত্যাগ্রহের ৬৩ তম দিনে অর্থাৎ ২২ শে জুলাই সকাল সাড়ে ছটায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশ সমগ্র আশ্রম প্রাঙ্গণ ঘিরে ফেলে। সত্যাগ্রহী গান্ধীজনদের প্রাঙ্গণ খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সত্যাগ্রহ মঞ্চকে সরিয়ে নিতে শুরু করেন। এই শান্তিপূর্ণ অহিংস প্রতিবাদ করায় সর্বসেবা সংঘের সভাপতি, চন্দন পাল ও বিশিষ্ট গান্ধীবাদী রামধিরাজ সহ ছয় জনকে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়। বিশ্বজুড়ে শান্তি আন্দোলনের পিঠস্থান, বিগত ৬ দশকের বেশি সময় জুড়ে সাধনা স্থল রূপে দেখা হতো সেই ‘গান্ধী বিদ্যা সংস্থান’ থেকে স্বৈরাচারীর ভারী বুটের উল্লাস ধ্বনিতে অহিংস সত্যাগ্রহীদের জেলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়।

অথচ এলাহাবাদ হাইকোর্ট মামলা নম্বর ২৯৯৭৫/২০০৭ তারিখ ১৬/০৫/২৩ স্পষ্ট আদেশ দিয়েছেন এই জমি বিষয়ে বারানসী ডিএম সমস্ত তথ্য নথি যাচাই করে ‘সর্ব সেবা সংঘের’ হাতে হস্তান্তর করতে হবে। সর্ব সেবা সংঘ তার ১২.৮৯ একর জমির ক্রয় মূল্য বাবদ ১৯৬০ সালে অর্থ মূল্য ২৬৭৩০/- টাকা ১৯৬১ সালে কেনা অর্থ মূল্য ৩২৪০ টাকা এবং ১৯৭০ সালে অর্থ মূল্য ৪৪৮৫ টাকা এসবিআই বারানসী ট্রেজারি চালান নম্বর যথাক্রমে ১৭১ঘ,ট্রেজারি চালান নম্বর রেজাল্ট চালান ৩১ঘ,৫মে ১৯৫৯, ২৭এপ্রিল ১৯৬১ এবং ট্রেজারি চালান নম্বর ৩, ১৮ জানুয়ারি ১৯৬৮ যে অর্থ প্রদান করা হয়েছিল সেই নথি সর্ব সেবা সংঘ সর্বসমক্ষে এনেছে। আরও জানা দরকার ১৯৬৪ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এই “গান্ধী বিদ্যা সংস্থান” এর দ্বার উদঘাটন করেছিলেন।

বিষয়টি দাঁড়ালো এইরকম, স্বাধীনতা সংগ্রামী দেশ গঠনের কারিগর গান্ধী আদর্শে বিশ্বাসী মানুষেরা সামাজিক কাজ ধারাবাহিক ভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্থার অর্থ দিয়ে সরকারের কাছ থেকে একটি জমি কেনে এবং সেই সংস্থার ৬৩ বছর পরে যে সংগঠন স্বাধীনতার সংগ্রামে ব্রিটিশকে মূল শত্রু না ভেবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিল তারাই স্বাধীনতার সাত দশক পরে দেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগকে চালিত করে ভোটে জিতে নিজেদের ইচ্ছামতন সামাজিক সম্পত্তিকে ব্যবহার করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারছে।

এবার ড: রাজেন্দ্র প্রসাদও জালিয়াত – উত্তরপ্রদেশ সরকার

এই সমগ্র বিষয় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে পৌঁছাতে গত ৩১ শে জুলাই ২০২৩ সর্ব সেবা সংঘের সভাপতি, চন্দন পালের নেতৃত্বে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। সেখানে জানানো হয়েছে, দেশ জুড়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে আগামী ৯-১০ আগষ্ট গান্ধীবাদী ও সামাজিক আন্দোলনের কর্মীদের বারানসীতে পৌঁছানোর আবেদন করা হয়েছে। সেখানে আগামী আন্দোলনের দিক নির্দেশ তৈরি হবে।

আরও পড়ুন – দুই পৃথিবী