নদী বন্ধুর খোঁজে

বাংলার এক জেলার সঙ্গে অন্য জেলাকে জুড়েছে বাংলার একাধিক নদী, আর জুড়ে রেখেছে নদী পারের এক সন্তানের সঙ্গে আরেক সন্তানকে। তাই নদী দেখার পথে নদী বন্ধুর খোঁজে আবার এই বেরনো। আমার সব সময় মনে হয় নদীর পারে পারে তার সন্তানদের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে উঠলে, বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে তবেই নদী বাঁচানোর লড়াই দিশা পাবে।


মালদা শহরের লাগোয়া মানুষের নগর বাসস্থান গড়ে উঠেছে মালঞ্চ পল্লীতে। সেখানকার বাসিন্দা পুরনো নদী বন্ধু শ্রীপর্ণার বাড়ি পৌছাতেই আলাপ হল ওনার জীবন সঙ্গী শিবেশ দত্তর সাথে , এইবারের পথে পাওয়া প্রথম নদী বন্ধু। শিবেশ প্রথমেই নিয়ে চললো বাড়ির ছাদে, কারণ ছাদ থেকেই দেখা যায় বদরাইল বিল। রেলপথে মালদা শহরে ঢোকার আগে অনেকেই হয়তো এই বিল দেখেছেন। কিন্তু নতুন নদী বন্ধু নজর কাড়লো এই বদরাইল বিল বুজিয়ে একের পর এক কংক্রিটের জঙ্গল দেখিয়ে। বদরাইল বিল মহানন্দা নদীর ফেলে যাওয়া পুরনো এক পথ। যাকে ভূগোলের ভাষায় বলে প্যালিও চ্যানেল। নদী আবার হয়তো কোনো এক বন্যায় তার পানি প্রবাহকে এই পথেই গড়িয়ে দেবে তত দিন বিল নামেই পরিচয়। তবে পানি প্রবাহ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা করার দায় তো জমি হাঙরদের নেই। তাই অবাধে এই বদরাইল বিল বুজিয়ে একের পর এক অট্টালিকা। অট্টালিকায় উচ্চশিক্ষিত বাসিন্দাদের শিক্ষা এনেছে বাসনা, প্রকৃতি লুঠের। তাই ফি বছর বর্ষায় মালঞ্চপল্লী ডুবলেও, তাঁদের ভ্রুক্ষেপ নেই। শিবেস আঙ্গুল দিয়ে দেখালো, মোবাইলের টাওয়ার আর যতদূর চোখ যায় শুধু বাড়ি আর বাড়ি।


মালদা জেলার জীবন জীবিকা জুড়ে রয়েছে প্রকৃতি আর প্রকৃতির দান। বড় কলকারখানা না থাকলেও, সংলগ্ন জেলার বাসিন্দাদের পছন্দের শহর মালদা। এক চক্করেজেলার সমস্ত প্রশাসনিক কাজ করে ফেলা যায় তাই হয়তো। মহানন্দার দু-পার জুড়ে গড়ে উঠেছে শহর মালদা ও ওল্ড মালদা। এক পারের মিউনিসিপালিটি ও থানার নাম ইংরেজবাজার অন্য পার ওল্ড মালদা। বহুদিন আগে শিলিগুড়ির এক বন্ধু মহানন্দা নদীর নাম বলেছিল ‘মহাগান্ধা” (হিন্দি উচ্চারণে) নদী। শিলিগুড়িতে যে নদী শুকিয়ে, নর্দমায় পরিণত হয়েছে মালদা শহরে এসে ক্রমে তার চড় দখল হবে এতাই তো স্বাভাবিক। দখল শুধু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ টিন, কাঠ, দরমা দিয়ে নিজেদের বাসস্থানের অভাব পূরণ করা নয় সরকারী আবাসন গড়ে ওঠার জন্যও নদী পথ দখল হয়েছে এই শহরে, সিরঘাট ব্রিজ পার হওয়ার সময়ে দেখা যায় খুব সহজেই। সদর ঘাট, কোর্ট স্টেশন, শহরের আরও নানান অলিগলি ঘুরিয়ে শিবেস স্কুটিকে দাড় করাল বেহুলা ব্রিজের উপর। বাংলা জুড়ে মনসামঙ্গল কাব্য তাঁর কাহিনীকে বাঙ্গালিদের মনপ্রাণ জুড়িয়ে রেখেছে এখনও। অদম্য বাংলার নারীর জেদে তাঁর সিথির সিঁদুর বাঁচাতে একাকী স্বামীর মৃতদেহকে নিয়ে চলেছিল নদী পথে শিবের দরবারে। তার স্বামী প্রাণ ফিরে পেতে চম্পক নগর থেকে বেহুলা লক্ষীন্দর শুরু করেছিল তাদের যাত্রাপথ। সেই কাব্য কাহিনীকে বাঙালী তার জীবন সংস্কৃতিতে জুড়ে নিয়েছিল নদী পথের নাম বেহুলা রেখে। গঙ্গা থেকে বেরিয়ে এসে এই বেহুলা নদী মালদা শহরের খানিক দূর থেকে বয়ে গিয়েছিল। শুধু মজা, কচুরিপানায়ভরা নদীখাত বন্যার জলের অপেক্ষায় থাকে প্রতি বছর। জলহীন নদীর দেহ দখল করা বোধহয় ইটভাটার মালিক ও নাগরিকের জন্মসিদ্ধ অধিকার মনে করে শহরবাসী। এখানে তার অন্যথা নেই। নদীর উপর ব্রিজ হয়, নদী পথ আটকে। নিয়ম তারপর ব্রিজের নীচের জলপথের বহমানতা ফিরিয়ে দেওয়ার। সে কাজ হতে দেখলাম না কোথাও। বেহুলা নদীর পাড়ে চলছে বিশাল ম্যারাপ বেঁধে ২৪ প্রহর কৃত্তন। পাশে মেলা, জিলিপি থেকে কাঠের আসবাপপত্ত তৈরি হচ্ছে প্রয়জন মত বলুন ওখানেই তৈরি হয়ে। নদীর উপর বাঁশ দিয়ে সেতু করতে হয়েছে জলের নাগাল পেতে সেখানে পুরহিত ভক্তের মনস্কামনা পূরণের জন্য মন্ত্র উচ্চারণ করছেন। কিন্তু আমার মন ভেসে উঠল অন্য এক কাহিনীতে, গল্পকার প্রিয় দাদা রাজেশ দার লেখা ‘চোখের জল’ গল্পে। সেই গল্পের নায়িকা রাধারাণী, যমুনা তীরের প্রেমের করুণ কাহিনী কৃত্তনে শুনিয়ে মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গ্রামে গ্রামে কিন্তু তার জীবনের কান্না তো থামেনা জন্ম দুঃখী রাধারাণীর কান্না থামে তার শেষ নিঃশ্বাসে। জানি না এই মেলায় যে আপরুপ সুন্দরী একনাগাড়ে কৃষ্ণ কাহিনী গেয়ে চলেছে তাঁরও কপাল রাজেশদার সৃষ্টি ‘রাধারাণী’র মতন কিনা ? আমি মণ্ডপের কাছে এগিয়ে গিয়ে রাধারাণীর কান্না খুঁজলাম নাকি আমার কোন কান্নাকে এই ধর্মপ্রাণ মানুষ গুলো চোখ থেকে বেঁয়ে আসতে দেখলাম জানি না। নাস্তিক যুক্তিবাদি হয়েও এই সমবেত কান্নায় কেন যে আজকাল নিজেকে খুঁজি চলি। যাইহোক এবার ফিরি নদীতে, শহর লাগোয়া বেহুলা হোক আর মাহানন্দা নদীর করুণ কাহিনী বাংলার অন্য জেলার নদীর কাহিনী এক।সে কথা আরও শুনবো এই পথে।


শ্রীপর্ণা-শিবেশ কে বিদায় জানিয়ে এগিয়ে চললাম পারদেওনাপুর। পারলাল্পুর ফেরি ঘাটে অপেক্ষা করছিল সাদ্দাম ওর বাইকে যখন উঠেছি তখন সন্ধা গড়িয়ে রাত। পরের দিন ভোরে পৌঁছাল এবারের বাকি পথের সাথী সৌরভ। উচ্চমানের ভবঘুরে হয়ে ওঠার সর্বগুণ সমপন্ন আমার এই নতুন নদী বন্ধু । অনন্ত ভালবাসা আর আগ্রহ নিয়ে নগর জীবনের অভিকেন্দ্র বলকে ছিন্ন করতে চাইছে। নিউজ পোর্টালে লেখালেখির তাগিদে চরিয়াল খাল পুন্রুদ্ধারের অন্দোলন চলার সময়ে আলাপ। এবার বন্ধুত্ব নিবিড় হবার পালা।


প্রখর রোদের কারণে বিকেল হতে বেরলাম গ্রামের পথ পেরিয়ে পৌঁছা লাম গঙ্গা পারে যেখানে জল কম বালি বেশী। নদীর বুকে বড় বড় কংক্রিটের থাম দাড়িয়ে আছে। যত দূর দেখা যায় শুধু বালি আর বালি। গোড্ডার আদানি গোষ্ঠীর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপন্ন বিদ্যুৎ যাবে এই পথে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ ছাড়া উন্নয়নের মাপকাঠিতে নম্বর কম, তাই ‘যা গেছে তা যাক’। এপারে হাঁক মারলে ওপারের নৌকা চলে আসত এপারে এমন নদীর চওড়া হতে হতে আজ কয়েক কিমি। মাত্র কিছু বছরে। “এরপর গানের কথা জানা নেই নেই…


কবি দরাফ খাঁর রচনায়, ‘পয়ো হি গাঙ্গং/ত্যজতামিহাঙ্গং/ যদি চাপি চাঙ্গং/করে রথাঙ্গ চরণে চ গাঙ্গম।‘ অর্থাৎ জল বলতে তো গঙ্গাজল। এতেই যেন জীবনাবসান না হয়।যদি দেহ ফিরে আসে তাহলে হবে দেবদেহ। (সুত্রঃ বাংলার নদী, দিলীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়) যে ভারতে ধর্ম বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষের কাছে দেবতার আশীর্বাদ গঙ্গা জল সেই নদী কীভাবে এত বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে ? ফারক্কাতে যত বার গিয়েছি বোঝার চেষ্টা করেছি সমস্যা আসলে কোথায়ে? সমস্যা আসলে কি? অধ্যাপক অমর চন্দ্র কর্মকার লেখা ‘অথ গঙ্গা’ নামে একটি বই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ‘ফারাক্কা ব্যারেজ শুধু গঙ্গার নয়, গাঙ্গেয়দেরও হাড়িকাঠ’ নামের একটি অধ্যায়ে ফারাক্কা সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সে তত্ব আলোচনা আগ্রহীদের খুঁজে নিয়ে পড়তে আনুরোধ রইল।


এর পরের নদী বন্ধু আবদ্দুলা মুসুলুদ্দিন পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক। বছর চল্লিশেক বয়স। কয়েকবার ফোনে কথা হলেও দেখা হয়নি । বীরনগর বাজারে পৌঁছে বেশ ফোনে জানালাম। খানিক বাদেই এসে পড়লেন বললেন বাইকে বসুন, আমরাও উঠে পরলাম। এখনো জানি না এনাকে নদী বন্ধু বলা যাবে কি না? বারবার মানুষ চেনার পরীক্ষা দিতে হয়েছে এই জীবনে আরও দিতে হবে নিশ্চয়ই । যাই হোক প্রথম আলাপেই বোঝা গেল ভাঙন ওনার জীবনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। ভাঙন পীড়িত মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতা ওনাকে জীবিকা ছেড়ে বারবার ভাঙন কবলিত মানুষের কাছে টেনে নিয়ে আসে। আমাদের মতন অচেনা,অখ্যাতের ডাকেও ছুটে চলে এসেছেন। বীরনগরের ভাঙনের কথা কিছুদিন ধরে শুন ছিলাম কিন্তু দেখা হয়নি। মানিকচর,ভুতনি দিয়াড়া এই নামগুলির সঙ্গে ভাঙনের খবর রাখা মানুষের পরিচয় আছে কিন্তু বীরনগর নাম সেই অর্থে নতুন নাম। ২০১৬ থেকে এই অঞ্চলে ভাঙন নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে সিমেন্টের ত্রিকোণ আকারের পরকুপাইনের মতন পাড় বাঁধ রক্ষার প্রযুক্তিও এখানে ব্যার্থ। নদী ছিল প্রায় ১২ কিমি দূরে শিকারপুরে আজ এর উঠান উঠান হয়ে ক্ষেত, পুকুর, মাঠ, মন্দির, মসজিদ, বড় ছোট স্কুল হয়ে ভাল থাকার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে এখন এই গ্রামে। গ্রাম না বলে আতঙ্কিত কিছু “রক্ত মাংস” পিণ্ড বলা ভাল । চেমা গ্রাম স্কুলে দাঁড়িয়ে আবদ্দুলা দাদা এই অঞ্চলে মানুষের বেদনার কথা তুলে ধরলেন। ভাঙন স্বাভাবিক নিয়মে চলা ঘটনা? নাকি এর পিছনে পরিকল্পনার বড় ব্যর্থতা? এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট সরল ভাষায় বললেন। এই বিপদের জন্য দায়ী কেবলমাত্র দায়ী ফারাক্কা ব্যারেজ আর ব্যারেজ করতিপক্ষের উদাসীনতা। যার শুরু শুরুতেই, ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরির সময় হোক বা ১৯৭৮ সালের প্রীতম সিং কমিটি বা ১৯৯৬ সালের কেশকার কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের কথা ভাবা হয়নি কখনই। ‘অথ গঙ্গা কথা’ বইতে অমরচন্দ্র কর্মকার, গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশান কমিটি ও নদী বিজ্ঞানী কল্যাণ রুদ্র মত উল্ল্যখ করে বলছেন মালদা জেলায় ৭৫০ বর্গ কিমি জায়গা নদী ভাঙনে ভেসে গিয়েছে। ৬০ টি প্রাথমিক, ১৪ টি মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্কুল নষ্ট হয়্যেছে।মুরশিদাবাদ জেলার ৩৫০ বর্গ কিমি ভাঙন কবলিত। এই সমস্ত সংখ্যা দিয়ে জানা তথ্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়-বই ইত্যাদিতে পাই কিন্তু সত্যিকারের মানুষের দুর্গতি জানতে হলে পৌছাতে তাদের কাছে। চামাগুরি বিদ্যালয়ে ২০১৬ সাল থেকে বসবাস করছেন অশতীপর বৃদ্ধা জনালেন চার ছেলে-বউ-নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার কেমন করে বিছিন্ন হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা এই বছর নদী একেবারে এই আশ্রয়ের কাছে এসেছে এবার এখান থেকেও সরে যেতে হবে। গ্রাম গড়ে ওঠা মানে তো শুধু বারি-ঘর গড়ে তোলা নয়, পথ ঘাট দোকান হাট মন্দির মসজিদ স্কুল খেলার মাঠ আরও কত কি এ সব আজ জলের অতলে ডুবেছে যা আর ফিরে আসবে না। সরকার টোলার মসজিদ ভেঙে যাওয়া তে গ্রামবাসী সমবেত ভাবে সাত-আট ঘণ্টা কেঁদেছিল সে কথা শুনলাম। আমি তো নাস্তিক মন্দির মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন নেই কিন্তু এই মানুষ গুলির কান্না ভেজা গলাকে অস্বীকার করি কি করে। গিরিন্দ্রশেখর বসু তাঁর ‘পুরাণ প্রবেশ’ গ্রন্থে বলছেন, “যত দিন পৃথিবীতে মানুষ থাকিবে তত দিন সে কোনও না কোনও ধর্মে আশ্রয় করিবে”। এই কথা আমার বন্ধুরা মানবেন না জানি। তবুও আলোচনা চলুক পুরাণ প্রবেশ এর মতন বই নিয়ে।


এই পরিভ্রমণে সব থেকে কষ্টকর অভিজ্ঞতার মুখমুখি হলাম ভাঙা টোলায় পৌঁছে ছেমাগুরি স্কুল মধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারিত হওয়ায় প্রশাসন থেকে লরি করে মানুষদের নিয়ে আসা হয়েছিল, বসবাসের সামান্য ব্যবস্থা এখনে নেই। শুধু একটি করে প্লাস্তিক সিট আর মাথার উপর হাই টেনশন লাইন। এমন কি শৌচ করার কোন ব্যবস্থা নেই একদিকে রাস্তা অন্য দিকে গ্রামের বাড়ি। কেউ যদি মাঠে শৌচ করতে যায় যেদিকেই যাবে সেই দিকের বাসিন্দারা খেদাবে, এই প্রসঙ্গটি হয়তো পড়তে ভাল লাগছে না কিন্তু ভেবে দেখুন আমরা এম্ন মানুষ এর কে পেলাম সকালের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে গ্রামের মানুষের সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে নিজের কাপড়ে পায়খানা করে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। এই লজ্জা শুধু কি তার,নাকি কলকাতাতে ফারাক্কার ফিডার ক্যানেলের সুবিধা ভোগী সকলের।


ফারাক্কা ছেড়ে বিদায় নিলাম বিষাদ ভরা মন নিয়ে। নতুন নদী বন্ধু সৌরভেরও একি অবস্থা। নামলাম ফারাক্কার পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছিল তাঁদের সাথে দেখা করলাম। বৈকন্ঠপুরের কাছে কিছু মৎস্যজীবীদের সাথে কথাও হল। যদিয়ও তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু কথা হল না। রাস্তায়ে দাঁড়িয়েই কথা। ২০১৮ সালে এক বার এই যায়গায় গিয়েছিলাম তবে এখন সঙ্গী বদলেছে।

মৎস্যজীবীদের সেই কথা মনে রয়েছে। তবুও বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক স্থাপন কিছু হল না। সেখান থেকে বহরমপুর যাওয়ার বাস ধরলাম। বহরমপুরে অনেক বন্ধু সাথী আছেন, আগে অনেকবার গিয়েছি তাঁদের আথিতেওতা পেয়েছি । এবার তাঁদের বলিনি যাওয়ার কথা আবার পথে বাস খারাপ হল তাই মধ্যরাতে খাওয়া আর রাত্রিবাসের জন্য কম টাকার লজ খোঁজার পালা। অত রালা।লাল কাপড় বাঁধা বিরিয়ানির দোকান খোলা। সেই দিয়েই হল আমাদের রাত্রিরের বড়া খানা। সৌরভের খাদ্যের প্রয়োজন বড় কম। আর আমি তো ‘পেলে খাই পেলে শুই’, ‘না পেলে’ ‘না পাই’ এর পরীক্ষা অনেক আগেই দিয়েছি। সৌরভও ভবঘুরে শাস্ত্র এর ছাত্র ভাল। তাই আমাদের কোন অসুবিধা হল না। বরঞ্চ সব কিছু ভালই জুটল। সকাল হতেই বেড়িয়ে পরলাম ডোমকলের দিকে। এইদিকে আমার আগে আসা হয়নি তাই পৌঁছানোর বিষয়ে খুব উৎসুখ ছিলাম। ভৈরব,শিয়ালমারি, জলঙ্গি, গুমানী নদী এই একটি ব্লকেই। এদের দেখার অধীর আগ্রহ তো ছিলই সঙ্গে ছিল বিজ্ঞান আন্দোলনের অতি পরিচিত মুখ জয়দেব দে দার সাথে দেখা করার। যিনি বিজ্ঞান প্ত্রিক বই-পুস্তিকা প্রকাশ ও হাতে কলমে বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়ে চলেছেন অক্লান্ত পরিশ্রমে। বাংলায় জয়দেব দা কে জানেন না বাংলায় এমন বিজ্ঞান কর্মী পাওয়া যাবে না। পৌছালাম পরের বাসেই ছিলেন বহরমপুরের সাথী সোমনাথ ভট্টাচার্য সে যুক্ত হতে একসাথে গেলাম জয়দেব দার অফিস। জয়দেব দার ব্যবস্থাপনায় দারুন মধ্যন্যভোজ সেরে বিকেলে বেরহলাম জলঙ্গির দিকে। এখানে শুধু নদী নয় থানার নামও জলঙ্গি। পদ্মা নদী আর দূরে রজসাহী শহর দেখা আর নৌকা ভ্রমণ সেরে ফেরা জয়দেব দার ডেরায়। উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক কিন্তু কি অসাধারণ অমিক মানুষ। যত দেখি তত শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়। পরের দিন বিদায় নিয়ে আমরা গেলাম ইসলামপুর, এটি সোমনাথ দার পূর্ব পরিচিত স্থান। বাস থেকে নেমে অল্প অপেক্ষার পরেই পৌঁছালেন এই পথের অন্যতম গুরুত্ব পূর্ণ নদী বন্ধু ধীমান দাস বাবু। মুর্শিদাবাদ জেলার এক সময়ের বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় যেমন ফিট তেমনই ফুর্তি তে থাকা মানুষ। অল্পতেই আলাপ হয়ে যায় যেন কত পুরোন চেনা। সেখানেই ঠিক হল একটি গাড়ি নিয়ে আমরা বের হব, কথা হতেই গাড়ির চালক হাজির। ছোট্ট কোলের বাচ্চা নিয়ে হাজির,হয়তো বাজারে এসেছিলেন ধীমান বাবুর ডাকে ছুটে এসেছেন। একটু পরেই গাড়ি নিয়ে এলেন আমরা বের হলাম। ব্লকের নদী শুধু নয় গ্রাম, পাড়া , মাঠ ঘাট সবই ধীমান বাবুর হাতের তালু। একের পর এক নদী দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম ভৈরবের উৎসের কাছে। দূরে পদ্মার পাড়ে বাংলাদেশ আর এপারে আমাদের বাংলা। নদী জুড়ে রেখেছে নদী পারের এক সন্তানের সঙ্গে আরেক সন্তানকে।