তিস্তা পাড়ের বৃত্তান্ত তারা পড়েননি। কিন্তু তারা জানেন তিস্তা পাড়ের সব কাহিনী। “তারা” অর্থাৎ জলপাইগুড়ি জেলার তিস্তা নদীর চরে থাকা ২৫ হাজার মানুষ। কেউ নদীর গতি বদলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন পঞ্চাশ বছর আগে। কেউ দেশভাগের টানা-পড়েনে এসে পৌঁছেছেন। জীবন জীবিকা বসতি গড়ে তুলেছেন তিস্তা চরে। নদী কে এনারা জানেন তার সঙ্গেই আছেন প্রজন্মেরপর প্রজন্ম ধরে। কিন্ত কিছু বছর যাবত ভাঙন এদের জীবন যন্ত্রণাকে বাড়িয়ে তুলেছে। তবে প্রতি বছরের নিত্য যন্ত্রণা ‘ভাঙন’ নয়, তার থেকে অনেক বেশী প্রশাসনের উদাসীনতা। বিশেষ করে এই বর্ষা ও বর্ষা পরবর্তী সময়ে। নদী পাড়ের মানুষ তাদের জীবনের অভিজ্ঞতায় জানে নদীর এই ভাঙ্গা গড়ার ছন্দে বেঁচে থাকতে। কিন্তু আজকের ভাঙন যার মূল কারণ গাজলডোবা ব্যারেজসহ নদীর উজানে অজস্র বাঁধ। এ বছর যখন রাজ্য রাজনীতি পঞ্চায়েত ভোটের উত্তাপে জ্বলছে। তখন জুলাই এর দুই তারিখ, রবিবার জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বোয়ালমারি নন্দনপুর জিপি অঞ্চলে তলিয়ে গেলো বহু চাষের জমি। বর্ষার শুরুতেই এসে গেল বিপদ।
চরের বাসিন্দারা পেশাগত ভাবে প্রায় সকলেই কৃষিকাজে নিযুক্ত। নদীর পাড় ভাঙলে এতদিন যাবত ইরিগেশন দপ্তরে জানানো হলে তারা জানিয়েছেন তারা মেন ল্যান্ডের বাইরে কাজ করেন না। এরপর ব্রহ্মপুত্র বোর্ডে কথা বলা, ডেপুটেশন দেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি কারণ, ব্রহ্মপুত্র বোর্ড কেন্দ্র সরকার পরিচালিত। রাজ্যে কাজ করার জন্য রাজ্য দপ্তরের যে সুপারিশ প্রয়োজন হয় তা পাওয়া যায় নি। পরবর্তীকালে MGNREGA এর একটি ফান্ড পাড় রক্ষার কাজে লাগানো হয় ২০২১ সালে। বালির বস্তা ফেলে কিছুটা অঞ্চলে পাড় রক্ষা করা হয়।
আংশিক পাড় রক্ষায় বিপদ বাড়ে অপর পাড়ের মানুষদের, কারণ ফান্ড শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের পাড়ে এসব কিছুই হয়নি। একদিকের অর্থাৎ মেন ল্যান্ডের দিকের কিছুটা সুরক্ষিত পাড়ে জল ধাক্কা খেয়ে অপর পাড়ে আরও ক্ষতি করছে বর্তমানে। অসহায় মানুষেরা জানেন না কার কাছে তারা আর্জি নিয়ে যাবেন। ভোটের বাজারে ভাঙনে কোন গ্রামে কি হল তা ভাবার সময় নেই প্রশাসনের। স্থানীয় নেতাদের কাছে কোন উত্তর নেই বিধায়ক-সাংসদরা ব্যস্ত আরো ভোট শক্তি জোগাড়ে। স্থানীয় কৃষিজীবি মানুষের প্রশ্ন তবে এই ভোটে আমাদের কি লাভ ? এবার দল রাজনীতির তর্জার উর্ধে উঠে তারা সভা ডাকছেন সেখানেই সিদ্ধান্ত নেবেন ওনারা কিভাবে প্রশাসনকে বাধ্য করবেন তাদের দিকে নজর ঘোরাতে।
আরও পড়ুন – লিঙ্গারাজ আজাদ’জীর বক্ত্যবের ভাবানুবাদ