কুরোসাওয়া এঁর দুঃস্বপ্ন ও স্বপ্ন থেকে সত্যজিতের আগন্তুকের শেষ

কি দ্রুত বদলাতে থাকল দৃশ্য। শ্রীযুক্ত “এ.কে.” (বা আকিরা কুরোসাওয়ার পরোক্ষ ভূমিকায় অভিনেতা) ভান গখ সংগ্রহশালায় আনমনে ছবি দেখতে দেখতে Le Pont de Langlois ছবির ভেতরে সেই ছবির পৃথিবীতে ঢুকে গেলেন। ভান গখ তখন Field with Haystacks এর ধারে বসে সেই ছবি আঁকছেন। দৃশ্যতঃ তিনি আহত। এক বেদনা সঙ্গীতের মুর্ছনা মাঝে মাঝে ভেঙে যাচ্ছে এক স্টিম ইঞ্জিনের বাঁশিতে। একবার সেই স্টিম লোকোমোটিভ দেখাও গেল। শিল্প বিপ্লবের, যন্ত্র সভ্যতার, শুরুর প্রতীক। ভান গখের কথাতেও তা ঢুকে পড়েছে। ভান গখ বলছেন – আমি ক্রিতদাসের মত, লোকোমোটিভের মত, খেটে চলেছি। এদিকে, কাকেরা ডানা ঝাপটাচ্ছে। ভান গখ কথা থামিয়ে দিলেন, “আমি তোমার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করতে পারছি না।” তিনি থামলেন। কাকেরা উড়ছে। দূরে আবার স্টিম ইঞ্জিন, রেলগাড়ির লোকোমোটিভের শব্দ। “এ.কে.” Wheatfield with Crows ছেড়ে বেরোচ্ছেন। কুরোসাওয়ার “Dreams” ছবির পঞ্চম স্বপ্নের শেষ।

কুরোসাওয়া

হুড়মুড় করে সময় এগিয়ে দৃশ্য এসে পড়ল আধুনিক কালে। ষষ্ঠ স্বপ্ন। না দুঃস্বপ্ন! ভান গখের হলুদ রঙ এখন উজ্জ্বল। উজ্জ্বল লাল রঙও দেখা যাবে। কিন্তু সবই ভয়ঙ্কর এখন। লাল হল প্লুটোনিয়াম-২৩৯ এর বিস্ফোরণের আগুন। তা আনবে ক্যানসার। হলুদ স্ট্রনশিয়াম-৯০ বাষ্প। লিউকোমিয়া আনবে। উজ্জ্বল পার্পল রঙটা আসছে সিজিয়াম-১৩৭ এর থেকে যা কোষকে বদলে এক বিকৃত জীব তৈরী করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম… — ব্যাখ্যা করতে থাকেন এক বৈজ্ঞানিক বা হয়ত ব্যবসা-গোষ্ঠীর প্রধান। এক এক করে পরমাণু চুল্লির বিস্ফোরণ হচ্ছে। আর বাঁচার কোনো পথ নেই। “কিন্তু ওরা যে বলেছিল পরমাণু শক্তি নিরাপদ” কেউ যেন খেঁকিয়ে উঠে বলল। একটাই পথ ঐ বিষ বাষ্প থেকে বাঁচার। তা হল সমুদ্রের জলে ডুবে মরা। “মানুষের নির্বুদ্ধিতা অবিশ্বাস্য”! চিৎকার করের বললেন বৈজ্ঞানিক সমুদ্রের জলে ঝাঁপ মারার আগে। এক মহিলা তার একমাত্র শিশুকন্যাকে বাঁচানোর নিস্ফল চেষ্টা করছেন। ড্রিমস এর ষষ্ঠ স্বপ্নের শেষে সারা পর্দা জুড়ে রঙিন নানা বিষ ধোঁয়া।

শিল্প বিপ্লব, স্টিম ইঞ্জিন থেকে আধুনিক যুগে আমরা। পরমাণু বিস্ফোরণের যুগে।

১৯৪৫ এ হিরোশিমা, নাগাসাকি তে মার্কিন পরমানু বোমা মারা থেকে শুরু করে আমেরিকার থ্রি মাইলস আইল্যান্ডে বিস্ফোরন ১৯৭৯, ইউক্রেইনের চের্নোবিলে ১৯৮৬ সবই কুরোসাওযার জীবনে দেখা। তবে জাপানেই ফুকুশিমা-বিস্ফোরণ-২০১১ তিনি দেখেননি যখন ড্রিমস বানাচ্ছেন ১৯৯০ সালে। পরমাণু বিস্ফোরনে বিকৃত “মানুষ” হিবাকুশাদের আর্তনাদ নিয়ে শুরু হল সপ্তম স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন। এই পরমাণু বিস্ফোরণের ফলশ্রুতি কুরোসাওয়াকে তাড়া করে নিয়ে চলে। ড্রিমস এর কাজ মাত্র ৮ মাসে সেড়ে পরের ছবি Rhapsody in August নির্মাণে। যদিও পশ্চিমী সংবাদ-মাধ্যম তাদের অখুশী চেপে রাখতে পারেনি ড্রিমস নিয়ে। ড্রিমস এর পরের ছবিতে আসে নাগাসাকির এক ঠাকুরমা ও তাঁর পৌত্র-পৌত্রিদের কথা, যারা এখনো নাগাসাকির ক্ষত বয়ে বেড়ায়। কুরোসাওয়া হয়ত বুঝতে পারছিলেন সেই ভ্যান গখের মতই তাঁরও সময় বেশী নেই।

সেই সময়ে আবার সামনা সামনি ছবির নির্মান দেখতে ও কুরোসাওযারার সাথে কথা বলতে জাপানে ছবির সেটে চলে এসেছেন আকিরা কুরোসাওয়ার এক অনুরাগী ভক্ত গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। তাঁদের কথাবার্তার কিছু অংশ পাওয়া যায়, যার কিছুটা অবশ্যই দেখা যেতে পারে।

কুরোসাওয়া: সরকারি ভাবে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মোট মৃতের সংখ্যা ২৩০,০০০। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখের ওপর। আর এমনকি এখনো ২৭০০ জন পরমাণু-বোমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সেই বোমা ফেলার ৪৫ বছর বাদেও, যারা অপেক্ষা করছে কবে পারমাণবিক বিকিরনের যন্ত্রণা থেকে মৃত্যু এসে তাদের মুক্তি দেবে। অন্যভাবে বললে পরমাণু বোমা এখনও মানুষ মেরে চলেছে জাপানে।

গার্সিয়া মার্কেজ: খুব যুক্তিসঙ্গত ব্যখ্যা মনে হয় এটাই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দৌড়ে এসেছিল যুদ্ধটা কোনো রকমে শেষ করতে ঐ পরমাণু বোমা ফেলে, এই ভয়ে যে সোভিয়েতরা যেন মার্কিনদের আগে জাপান না হাতে পেয়ে যায়।

কুরোসাওয়া: হ্যাঁ, কিন্তু এই বোমা ফেলাটা ওরা শুধু অসামরিক ব্যক্তিদের আবাস ঐ শহরে করতে গেল কেন, যাদের কিনা যুদ্ধের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিলনা ? অন্যত্র তো সেনা নিবাস ছিল যারা যুদ্ধটা করছিল।

গার্সিয়া মার্কেজ: এমনকি ওরা রাজপ্রাসাদেও ঐ বোমা ফেলেনি, যেটা টোকিয়োতে খুবই অ-সুরক্ষিত জায়গায় ছিল। আমার মনে হয় হয়তো একটা ভাবেই এসবের ব্যখ্যা করা যায় যে মার্কিনরা জাপানের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে চাইছিল, সামরিক ক্ষমতাকে বজায় রেখেই, যাতে দ্রুত একটা আলোচনার মাধ্যমে সব ব্যবস্থা করে জাপানকে হাতে পাওয়া যায় ও যুদ্ধের অন্য সাথীদের লুঠের বখরা বা ভাগ না দিতে হয়। এরকম ঘটনা মানব ইতিহাসে কোনো দেশ দেখেনি। কিন্তু, যদি জাপান পরমাণু বোমা ছাড়াই আত্মসমর্পণ করত তবে কী তা আজকের জাপানের মত হত ?

কুরোসাওয়া: বলা খুবই মুশকিল। নাগাসাকির যে জনগণ বেঁচে ছিল তারা ঐ ঘটনার অভিজ্ঞতা ভুলে যেতে চায় বেঁচে থাকার স্বার্থে, কারণ অনেকেরই বাবা-মা আর ছিলনা, অনেকের ভাই-বোনেরা। তারা এখনো সেই দুঃখভার ভুলতে পারেনা। যুদ্ধের পর মার্কিনরা যখন ৬ বছর ধরে দেশটা দখল করে রেখেছিল তারা নানা ভাবে চেষ্টা করেছে এই বিস্মরণকে বাড়ানোর, জাপান সরকারও সেই কাজে হাত লাগিয়েছে। ঠিক আছে, আমি নয় এসবকিছুকে যুদ্ধের অবশ্যাম্ভাবী ট্র্যাজেডি হিসেবে মেনে নিতে রাজিও হলাম। কিন্তু আমার মনে হয় যে দেশ জাপানে পরমানু বোমা ফেলেছিল তাদের উচিত জাপানের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া। যতদিন না তা হচ্ছে, এই নাট্য শেষ হবে না। (Courtesy: http://www.openculture.com/2014/07/akira-kurosawa-gabriel-garcia-marquez-talk-about-filmmaking.html)

আর তাই যেন কান্ (Cannes) চলচ্চিত্র উৎসবে এক মার্কিন সাংবাদিক উল্টে চেঁচিয়ে কুরোসাওয়াকে বলেন – আপনিই বলুন কেন বোমাটা ফেলতে হয়েছিল। যেনবা কুরোসাওয়ারই ক্ষমা চাওয়া উচিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য। অনেক চলচ্চিত্র সমালোচক এও বলেছিলেন যে কুরোসাওয়া উগ্র দেশপ্রমিক, উনি কেন ওনার দেশের যুদ্ধ-প্রচেষ্টার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। আসলে পশ্চিমী সংবাদ মাধ্যম ও সরকারগুলি এটা স্বীকার করতেই পারেনা যে তারাই প্রথম ডাবলিউ.এম.ডি. বা উইপন অফ মাস ডেস্ট্রাকশন ব্যবহার করে – জাপানের ক্ষেত্রে পরমানু অস্ত্র ও ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে রাসয়নিক অস্ত্র।

কুরোসাওয়া ঝড়ের গতিতে শেষ তাঁর কাজগুলো করতে থাকেন, একবার এক দুর্ঘটনায় পড়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ীও হন, বিদায় নেন ১৯৯৮ সালে। ভাগ্যিস উনি ২০১১-র ফুকুশিমা পরমানু বিদ্যুতকেন্দ্র বিস্ফোরণ দেখে যান নি, তাঁকে দেখতে হয়নি কিভাবে জাপান সরকারও জবরদস্তি জনগণের পরমানু-বিরোধী বিক্ষোভকে চেপে দেয়।

জাপান সরকারের এই ভূমিকা অবশ্য বাজারের নিয়ম বা ব্যবসা সূত্র দ্বারা ব্যখ্যা করাই যায়। ফ্রান্সের আরিভা ও রাশিয়ার সরকারি রোসাটম্ ছাড়া বাকি সব পরমাণু চুল্লি নির্মাতা কম্পানির কার্যকরী মালিক এখন জাপানি শিল্পগোষ্ঠীরা – একটির মালিক তোশিবা, আরেকটির মালিক হিতাচি, আরকেটির মালিক মিৎসুবিশি। এই পাঁচ কম্পানিই সারা বিশ্বের পরমানু চুল্লি ও পরমানু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের হোতা। বিশ্বের উষ্ণায়ন বন্ধের জন্য গ্রীন-হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জন্য, ফশিল-জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের জন্য এসব কম্পানি নানা মাধ্যমে তদ্বির করে পরমাণু বিদ্যুত বানানোর জন্য। জনমত সংগ্রহের চেষ্টাও চলে। প্রায় চোখের সামনে ঝাড়খন্ডের যদুগোড়ায় একের কর এক শিশু বিকলাঙ্গ বা বিকৃতদেহ হয়ে যায় ইউরেনিয়াম খনির পরোক্ষ অভিঘাতে।মহারাষ্ট্রের ভুকম্পনপ্রবণ অঞ্চল জয়িতাপুরে পরমাণু বিদ্যুত নির্মাণের তোরজোর চলে। তামিলনাড়ুর কুদানকুলামে জনবিক্ষোভ কঠোর হতে মোকাবিলা করে থামানো হয়। কী করা যাবে – উন্নয়ন এর জন্য, আধুনিক জীবনের জন্য আরো আরো বিদ্যুত লাগবে বলে কথা…

কুরোসাওয়ার ড্রিমস এর মোট আট-স্বপ্নের শেষ স্বপ্নটা আসে। হিবাকুশাদের আর্তচিৎকার কালো ধূসর দুনিয়ার পর হঠাৎ এসে যায় রঙিন এক গ্রাম, যেনবা মাসানাবু ফুকুওযাকার কোনো গ্রাম – Village of the Watermills – ১৯৯০ — তখনও ‘ইতিহাসের অবসান’(End of History) ঘোষণা হতে সামান্য বাকি। তখন কিনা কুরোসাওয়া ইতিহাসের চাকা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছেন ?

— কিন্তু আলো ? আলো আসবে কোত্থেকেব?

— কেন, প্রদীপ আছে, আছে মোমবাতি।

— কিন্তু রাত তো খুবই ঘন অন্ধকার।

— হ্যাঁ, তাই তো হওয়ার কথা রাতের। রাত কেন দিনের মত আলোয় উজ্জ্বল হবে ? আলোর জন্য তো দিনের বেলা আছে। …মানুষ যেভাবে বাঁচতে অভ্যস্ত ছিল সেভাবে আমরা বাঁচার চেষ্টা করি। আজকের লোকেরা ভুলে যাচ্ছে তারা প্রকৃতির অংশ, তার প্রকৃতিকে খতম করছে, সেই প্রকৃতি যার ওপর জীবন নির্ভর করে। তারা – বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক-প্রযুক্তিবিদ এরা – তারা মনে করে তারা আরো ভালো কিছু করতে পারে। তারা হয়ত অনেক শিক্ষিত, বু্দ্ধিমান, কিন্তু তারা প্রকৃতির প্রকৃতিই বোঝেনা। তারা এমনসব জিনিস আবিষ্কার করে যা মানুষকে শেষে অসুখী বানায়। তবু তাদের কী গর্ব সব আবিস্কার নিয়ে। সব থেকে খারাপ ব্যাপারটা হল জনগণের মধ্যেও অনেকে সেরকম। তারাও মনে করে ওসব আবিস্কার যেন অলৌকিক। তারা ওসবকে পূজো করে …

ইতিহাস শেষ হয়ে আসছে। ১৯৯০ এর জাপানে এক ড্রিমস চলচ্চিত্রের শেষে, এক গ্রামে আগত এ.কে. গ্রামের বয়স্ক একজনের সাথে এরকম এক আলাপচারিতায় যখন ব্যস্ত, সেই ১৯৯০ সালে বাংলায় আরেক চলচ্চিত্রে এক ভু-পর্যটক দীর্ঘদিন পর নিজের শেকড়ের টানে দেশে ফিরে খুঁজে পাওয়া পরিবারে এসে যেন দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সে দেশে ফিরেও এক আগন্তুক, যেন বহিরাগত, মানিয়ে নিতে পারছে না। কুরোসাওয়ার আরেক অনুরাগী সত্যজিত রায়েরও দিন শেষ হয়ে আসছে। আগন্তুক মনমোহন (উৎপল দত্ত) – সে সত্যি কেন ফিরে এলো ? “ধান্দা” কী ? আধুনিক জীবন শেকড় এর অর্থের থেকে অর্থের শেকড় বেশী বোঝে; অর্থ, ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সম্পদ, পণ্য এসবই তো সব।

আগন্তুক দেখেন তাঁকে পালাতে হবে এই ‘সভ্যতা’ ছেড়ে। আগন্তুক ফের নিরুদ্দেশ। এদিকে তার রেখে যাওয়া ‘সম্পদ’ এর পরিমাণ অবাক করে যেমন, তেমনই তৈরী করে অন্য এক আবেগ।

আগুন্তুক

আগন্তুককে পাওয়া যায় অবশেষে এক গ্রামে। এক আদিবাসী সাঁওতাল পল্লিতে। তার পরিবারের সদস্যদেরকে সেখানেই বসতে বলে, জল দিতে বলে তাঁর সেখানকার আশ্রয়দাতা সাঁওতাল পরিবারকে। বিকালে কাজের দিনের শেষে গ্রাম জড়ো হয়। প্রাচীন যৌথ নৃত্য-বাদ্য সংস্কৃতি। আগন্তুকের ভালো লাগে তার এক উত্তরপুরুষ যখন মিশে যেতে পারে সেই গোষ্ঠীর নাচের সাথে। গ্রামে তখন সন্ধ্যার পর আঁধার নামছে।

“এণ্ড অফ হিস্ট্র” বইটি বেরোয় ১৯৯২ সালে। ইতিহাসের অবসান এর প্রায় মুখে দাঁড়িয়ে ১৯৯০ নাগাদ আকিরা কুরোসাওয়া, সত্যজিত রায় কী অন্যরকম কোনো ইতিহাস বা ভবিষ্যতের সন্ধানে ছিলেন ?

আরও পড়ুন – যেদিন থেকে দেশের বাবুরা মহুয়াকে অসভ্য ঘোষণা করল