এ লেখাটি এই কথাগুলো যেন বলে উঠতে পারার নয় বলে চলবার… আপাদমস্তক গ্যাজেট নির্ভর বাঁচতে বাঁচতে যে অন্তর্গত বিপন্নতার বোধ আরও চারিয়ে যাচ্ছে— তারই ছিন্ন বয়ান আমার- নিজেকে বলার নোটবুক থেকে পাঠাতে পারলাম আপনাকে। Touch Screen-এ সমানে ঘষে চলা আঙুল অসাড় হয়ে আসে…ঘুমোতে চোখ বুজলেও মাথা জুড়ে দপ দপ করে 4K resolution, Daikin-এর ACটা সমানে শুষে নিচ্ছে চামড়ার আদ্রতা… আর শীত বাড়ছে। কি করবো ? আহরণ, আগ্রাসী ভোগের হিংস্রতা আর অনাত্মীয়তার শৈত্য কুয়াশায় ঘিরে নিচ্ছে Homosapiens কেই। মাটির তলার জল ফুরাচ্ছে… গলছে হিমবাহ। খুব শিগগিরি ডুববে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপটা। প্রত্যন্ত ভারতবর্ষ চিৎকার করছে-‘ভাত দে হারামজাদা, না হলে তোর Digital India ছিঁড়ে খাবো।’ কানে তার গুঁজে নিই…
১৭/০২/২০১৬, বুধবার :- অরুণাচল প্রদেশে তাওয়াং অঞ্চলে উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস করে ড্যাম এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চলছে। অনেকদিন ধরে। সমগ্র অরুণাচলের নদী বেঁধে ফেলে বিপুল পরিমাণ জলবিদ্যুৎ তৈরীর পরিকল্পনা চলছে সেই মনমোহন সিং সরকারের সময় থেকে। ভারতবর্ষ আলোকিত হবে।
এই প্রকৃতি ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন লামা লবস্যাং গিয়াৎসোর নেতৃত্বে বিখ্যাত তাওয়াং মোনাস্ট্রির বৌদ্ধ লামাগণ এবং স্থানীয় জনতা। ইতিমধ্যে বিপুল জনপ্রিয় লামা লবস্যাং গিয়াৎসোকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে স্থানীয় জনতা থানা ঘেরাও করে। বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, লাঠিচার্জ এইসব ব্যবহার করে। তারা সরাসরি বিক্ষোভকারীদের মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালালে একজন বৌদ্ধ লামা সহ চার ব্যক্তি প্রাণ হারান। অসংখ্য আহত।
সাধারণ মানুষ নিজেদের পরিবেশ রক্ষার দাবীতে আন্দোলন করলে পুলিশ গুলি চালায়— কে অধিকার দিলো তাদের এই গণহত্যার ? আমাদের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এসব খবর ছাপেনা। একে অরুণাচল, তাও পরিবেশ- হাঃ! চীন-ভারত সম্পর্কের আরো কত গুরুত্বপূর্ণ খবর আছে না…!
২০/২/১৬, শনিবার:- আজ আবার আক্রান্ত ছত্রিশগড়ের প্রতিবাদী কন্ঠ সোনি সোরী অ্যাসিড আক্রান্ত সোনি সোরীকে আমি চিনি না। দান্তেওয়ারার সামেলি গ্রামের গোঁড়মুরিয়া তরুনী শিক্ষিকা যাঁর যোনী ও পায়ুপথে ধর্ষণের পর পাথর ভরে দেয় রাষ্ট্র। আমার স্বদেশ লুঠ হয়ে যায় প্রতিদিন প্রতি রাতে…. কোথায় যেন পড়েছিলাম। কদিন ধরে কাগজের পাতায় ছত্রিশগড়ের নাম ভেসে উঠছে বার বার, ‘মাওবাদী হামলা’ আর পাল্টা আধা সামরিক বাহিনীর চিরুনী তল্লাশি – এসব খবরের ফাঁক দিয়ে উকি মারতে চাইছিলাম। কেন ? – সহজ উত্তর হলো রাষ্ট্র চায় উন্নয়ন। জঙ্গলের আদিবাসীরা তার ‘সদুদ্দেশ্য'(!) না বুঝে বিরোধীতা করছে আর তাদের খ্যাপাচ্ছে anti-national নকশালরা। তাই নাকি দন্ডকারণ্য থেকে অন্ধ্র- বিহার- উড়িষ্যা, -তেলেঙ্গানা- মহারাষ্ট্র- ছত্রিশগড় মায় এই রাজ্যের জঙ্গলমহলও মাওবাদী ‘উপদ্রুত’। কিন্তু গাঁধীবাদী হিমাংশু কুমার, লেখিকা অরুন্ধতী রায়, ডাক্তার বিনায়ক সেন, সাংবাদিক মালিনী সুব্রমনিয়াম- এরাই বা কি করে জুড়ে গেলেন আদিবাসীদের দাবিদাওয়ার সঙ্গে ? কী সেই উন্নয়নের ধারনা যা আদিবাসীদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলছে? উন্নয়ন মানে শিল্পস্থাপন। তা বেশ, এই পাহাড় জঙ্গলে কোন্ শিল্প ?- না খনিজ শিল্প। ছোটবেলার ভূগোল বই আমাদের দল্লি রাজহারা, বৈলাডিলা, সিঙ্গারেলী, রাজনন্দাগাঁও-এই নামগুলো চিনিয়েছিলো। বস্তার সম্ভার যেমন, ছত্রিশগড় রাজ্যের গোণ্ড আদিবাসীদের এই ‘মা-ভূমি’-র মাটির নিচে আকরিক লোহা, বক্সাইট, চুনা পাথর-র ‘সম্পদ’ আর মাটির উপরে শাল-তমাল-মহুয়া-আদিম বনস্পতিরা।- তো এই ‘সম্পদ’কে তুলে আনতে তাই জঙ্গল কাটতে হবে, ডিনামাইট দিয়ে পাহাড় ফাটাতে হবে,তারও আগে উচ্ছেদ করতে হবে আদিবাসীদের। এসার, বিএসপি, জয়সওয়ালের মত একগাদা জাতীয় বহুজাতিক কোম্পানী কাপিয়ে পড়েছে এ জন্যই। আর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা বা পরিবেশ, বন আইনকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে কর্পোরেট পুঁজির অগুলি হেলনে সরকারও মদত দিচ্ছে এদেরই। উন্নয়ন বিরোধী তকমা দিয়ে ‘মাওবাদী দমনে’র নাম করে আদিবাসী উচ্ছেদের এই বিপুল তোড়জোড় আজ কাঁকের, নায়ারণপুর, দাস্তেওয়াড়া, সুরমা, বিজাপুরের সর্বত্র, সবার প্রথমে কিন্তু বসছে Para military Camp। তারপর তাদের প্রহরায় পাথর খাদান, ক্রাশার, স্পন্জ-আয়রন প্ল্যান্ট, সারি সারি লুঠেরা ট্রাকের ঢোকার রাস্তা… ।শুধু বৈলাডিলার চালু খনির Production Capacity হলো ২৭ Million Ton যা 2020 এর মধ্যে 100 Milion Ton করার লক্ষ্য নিয়েছে তারা। ভাবছিলাম, কোথায় যাবে মাঝি পরগণার হাজার হাজার গোন্ড আদিবাসীরা? ‘দেওতাও কি পঞ্চায়েত’ গড়ে যারা হাজার হাজার বছর ধরে রক্ষা করে এসেছে এই জল-জঙ্গল-জমিনকে, প্রকৃতিনির্ভর সংস্কৃতি আর কৃষ্টিকে। তাদের দেবী ‘অবুঝমাড়’ আর বুঝি তাদের আগ্রাসী ‘উন্নয়নের দানব’ -এর হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না!
এ যেন এক ‘অন্য ভারতবর্ষে’ বসে ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নে বিভোর আমরা মিডিয়ায় মাও-দমনের খবরে চিন্তামুক্ত হবো। আর ভুলে যাবো—নিঃশব্দে নিসর্গ ধ্বংসকারী বহুজাতিক কর্পোরেট পুঁজি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের মাথার উপর থেকে মেঘ-বৃষ্টি আর পায়ের তলা থেকে জল, জলাভূমি কেড়ে নিচ্ছে। নিজভূমে পরবাসী’ আদিবাদীরা কিন্তু এই লুঠের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন ‘একটি গাছের জন্য একটি প্রাণ দেবো’ …সেই চিপকো থেকে।
২৩/০৪/১৬, বুধবার :- সম্প্রতি দাবানালে ছারখার উত্তরাখন্ডের বিস্তীর্ণ জঙ্গল… প্রায় ২৫০০ হেক্টর এই জঙ্গল দিল্লির মত শহরকে অক্সিজেন জোগায়। প্রতি বছরই নাকি এরকম ঘটছে আজকাল। এই বছর উত্তরাখণ্ডের এই আগুন আরো ভয়ংকর… গ্রাস করেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির গাছকে। যার মূল্য বাজারে কয়েকশো কোটি। বনের পশুপাখিরা আহত, ত্রস্ত, দিশেহারা— দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাস্তুতন্ত্রও। স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, কাঠ ও জমি মাফিয়াদের ঘৃণ্য চক্রান্তে এই ঘটনা। গ্রাম পঞ্চায়েতও এই ষড়যন্ত্রে সামিল। পক্ষীবিশারদ রাহুল শর্মা বলছেন, ‘গ্রামবাসীদের মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয় জঙ্গলে আগুন লাগানোর জন্য… যখন আগুন নিভে যায় তখন বাকি জঙ্গলেও আগুন ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলতে থাকে বারবার। যে সব গাছ পুড়ে ঝলসে যায় সেগুলো কেটে কোটি টাকায় বিক্রি করে কাঠ মাফিয়া এবং পাচারকারীদের পকেট ভর্তি হতে থাকে।’
০৩/০৫/১৬, বুধবার:- নদী শুকিয়ে যাবে, মাটির নিচের জল উবে যাবে, সব গাছ মরে গেলে শুকিয়ে যাবে মাটিও, খুব শীঘ্রই গোটা উত্তর ভারত এর ফল ভোগ করবে। মানুষ জঙ্গল পোড়াচ্ছে- এটা সত্যিই অবাক করছে। মাটির সাথে সম্পর্ক ক্রমশ হারাচ্ছি, কী উপায় ?
এত কথা বলার কারণ কী ? কারণ অবশ্যই আছে। উত্তরাখন্ডের প্রায় ২-৩ দিন ধরে জঙ্গলে জ্বলছে আগুন যা সম্পূর্ণ ঝলসে দিয়েছে প্রায় ২৫০০ হেক্টর জমি। এই আগুন ইচ্ছাকৃত নাকি প্রাকৃতিক তা এখনও জানা নেই। জঙ্গল সাফাই করে কোনো পাঁচতারা আবাসন প্রকল্প বা হোটেল হওয়ার পরিকল্পনা নতুন কিছু নয়। আর তাই মনুষ্য সৃষ্ট দাবানল হলেও অবাক হবো না। আর একদিকে সারা ভারত জুড়ে খরা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলের স্তর অনেক নেমে গেছে। ভারতের বহু জেলা ভুগছে তীব্র জলকষ্টে। কিন্তু কোনো ৫ তারা আবাসন বা ৫ তারা হোটেলে গিয়ে দেখুন এক ফোঁটা জলের অভাব হবে না। পেপসি, কোকাকোলা পুরোদমে ব্যবসা করছে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করে। আসলে জলও এখন পণ্য জমি বা শ্রমের মতই। খবরে আর এক জায়গায় দেখলাম কানাডার একটি বেসরকারী সংস্থা বোতলে করে শ্বাসযোগ্য হাওয়া বিক্রি করবে। ( সংস্থাটির নাম খুঁজে দেখলাম Vitality Air)। বোতলে করে জল বিক্রি হতে পারলে, বোতলে করে হাওয়াও যে বিক্রি হবে এতো শুধু সময়ের অপেক্ষা। অন্যদিকে বৃহৎ পুঁজিকে আকৃষ্ট করতে, পুঁজির স্বার্থে গাছ কেটে শহর জুড়ে চলছে সৌন্দর্যায়ন। শ্রেণীশোষণ বা মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণ নিয়ে আমরা যতটা ভাবিত ততটা কিন্তু পরিবেশ শোষণ নিয়ে নই। মানুষ ও প্রকৃতি যে এক ও অভিন্ন- এই ধারণাকে আমাদের চিন্তন থেকে মুছে দেওয়া গেছে পশ্চিম ইউরোপে রেনেসাঁ পরবর্তী উপনিবেশ পত্তনের দরুণ। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে বিভাজন তৈরী করা হয়েছে এমনভাবে যাতে মানুষ প্রকৃতিকে ইচ্ছেমতো ভোগ করার তাগিদে পণ্যে পরিণত করে চলে ক্রমাগত।
০৫/০৫/১৬, শুক্রবার – সেদিন তাপসদা তারপর কথায় কথায় বললো, অনেকদিন আগে বেনারসে একটা People’s Science Congress-এ গিয়েছিলাম। তার শেষ দিনে ভাষণ দিয়েছিলেন বৌদ্ধ লামা সামদং রিনপোচে। তিনি বলেছিলেন,- ‘ আজ আপনারা জল কিনে নিয়ে ঘোরেন। আমরা যা আগে ভাবতেও পারতাম না। এরপর হয়তো একদিন নাকে মুখে চেপে রাখার জন্য শুদ্ধ অক্সিজেনের ব্যাগ বেরোবে। সেটাও কিনতে হবে।’
অনেকে হেসেছিল। রিনপোচেরা সত্যদ্রষ্টা হন বলেই শুনেছি।
২১/০৪/১৬, বৃহস্পতিবার – গত কয়েকটা দিন আমরা যখন মেতেছিলাম পাঁচ রাজ্যের ভোট রঙ্গে। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত-সহ মধ্যভারতের প্রায় দশটা রাজ্যের প্রায় তেত্রিশ কোটি মানুষ নিদারুণ বৃষ্টিহীনতা আর জলকষ্টে পুড়ছিলো। কিন্তু টিভি চ্যানেল-এর ব্রেকিং নিউজ স্ক্রল, আর সংবাদপত্রের প্রথম পাতা জুড়ে থাকছিলো শুধু জোট, সমীক্ষা আর আসন সমঝোতা। কবে তাহলে খবর হলো খরা ? যখন বোম্বে হাইকোর্ট জল অপচয়ের অভিযোগে আইপিএল ম্যাচগুলো মহারাষ্ট্রের বাইরে সরিয়ে নিয়ে যেতে বললো। ভারত রাষ্ট্রের মনে পড়লো ‘আরে তাই তো, দেশে খরা চলছে।’ ১০টা রাজ্যের ২৫৪টি জেলার আড়াইশো গ্রামের মানুষ— হ্যাঁ, তারাও এই দেশেই থাকেন। আসলে অ্যাত্তো বড় না দেশটা — ভাবতে মজা লাগে, এই ক্রিকেট খেলাটাই একমাত্র ‘একসূত্রে’ বাঁধতে পারে গোটা দেশটাকে! শুধু দক্ষিণ তেলেঙ্গানাতেই মারা গেছেন ৫৬ জন মানুষ (মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত)… আচ্ছা এদের মধ্যে ক’জনই বা ছিলেন যারা বিরাট কোহালিকে চিনতেন ?
০৩/০৪/১৬, রবিবার – ঋতঙ্কর ফেসবুকে পোস্ট করলো কয়েকটা ছবি দিয়ে… ‘পুড়িয়ে দেওয়া হল, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাতির দাঁতের ভাণ্ডার। প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের চোরা শিকারীদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হাতির দাঁত পুড়িয়ে দিয়ে সারা বিশ্বের ধনী মানুষ এবং চোরা শিকারীদের বার্তা দিলেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উত্তর কেনিয়াতা। কার্লোস স্লিম, মুকেশ আম্বানি, সৌদি রাজ পরিবারসহ সকল আরব ধনকুবের এবং বিশ্বের ধনী মানুষ যারা হাতির দাঁতের জিনিস ব্যবহার করেন। তাদের কেনিয়ান প্রেসিডেন্ট জানিয়ে দিলেন ‘কেনিয়ার মানুষের কাছে হাতির দাঁতের মূল্য ততক্ষণই আছে যতক্ষণ তা হাতির শরীরে শোভা পাচ্ছে। কেনিয়া খুব গরীব দেশ। হলেও দেশের ঐতিহ্য হাতির দেহাংশ বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করবে না। হাতি কেনিয়ার মানুষের হৃদয়ে বসবাস করে। পকেটে নয়।” সঙ্গে সারা বিশ্বের সকল মানুষকে হাতির দাঁতের জিনিস ব্যবহার না করতে আবেদন করেছে কেনিয়া সরকার। আলো ক্রমে নিভে যাচ্ছে জানি… তবু দু’দণ্ড মন ভালো করে দিলো…
গত ৪ বছরে শুধু কেনিয়াতেই প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার হাতি বেআইনীভাবে মারা হয়েছে। শুধু দাঁতের জন্য!
০৪/০৫/১৬, বৃহস্পতিবার :- বরানগর স্ট্যাটিসটিক্যাল ইন্সটিটিউটে পড়ান দেবুদা। বারবার বলেন, দ্রুত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, জিও-সোশিওলজি আর ইকো-ইকোনোমিক্স না ভাবলে চলবে না। Fukuoka-র ‘One Straw Revolution’ পড়তে দিয়ে বলেছিলেন, আজকের অর্থনৈতিকতা ও সমাজ বিজ্ঞান নিসর্গ নৈতিকতায় না জড়িয়ে ভাবা যাবে না,পড়ে দেখো।
১১/০৫/১৬, বুধবার – Dews Villeneuve একটি ছোট Film Next Floor (2008) দেখতে থাকছিলাম। হাতের থালায় রাতের চারটে রুটি আর ঢ্যাঁড়স ভাজা নিয়ে কম্পিউটার স্ক্রিনে- তখন ক’জন দামী নারী-পুরুষ টেবিল ভর্তি মাংস – নৈশভোজে উদ্যোগী― থরে থরে মাংস। বাছুর বা গণ্ডার… হ্যাঁ, সত্যি বাদ নেই কিছুই । কিন্তু খাবারের ভারে টেবিলটি ছাতশুদ্ধ ধ্বসে পড়ে। নিচের তলায় আবার শুরু হয় খাবার পরিবেশন… বেজে ওঠে সুললিত সঙ্গীত… আবার ধ্বসে পড়ে।তারপর আবার। Next Floor (2008)-এ আগ্রাসী, anthropocentric, ভোগ আর পণ্যবাদ তার সব প্রাচুর্য আর নিসর্গ-গেলা ঢেঁকুরের সঙ্গেই তলিয়ে যাচ্ছে। আমার হাতের রুটিতে মোড়া ট্যাঁড়স ভাজা মুখে তোলা হলো না…
১৫/০৫/১৬, রবিবার:- ‘পরিবেশ ভাবনা, প্রয়োগ ও রবীন্দ্রনাথ’ ―দেবলীনা মুখোপাধ্যায়। ১৮৮৪ সালে তিনি Environment Society গড়ছেন। ১৮৯২-তে পঞ্চভূতের ডায়রি, ছিন্নপত্রাবলী-তে “প্রাণময় বিশ্বায়িত’-য় তাঁর আত্মপরিচয়-এর খোঁজ। ১৯০১-এ শাস্তিনিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়। Social Engineering-এর পৃথিবীখ্যাত নাম Arthur Geddes, Patrick Geddes-এর পুত্র। ছাতিমতলা, উপাসনাগৃহ তৈরীতে Ecologic Architechture ভাবনার প্রয়োগে, পরিবেশ ভাবনার সূত্রেই কবির সাথে সখ্য, পরে শ্রীনিকেতন-এর কাজে সরকারি যোগদান। ১৯১২-১৩, মার্কিন দেশে ‘Gitanjali Tour’, বিশ্বের কাছে ‘সাধনা বক্তৃতামালা’-য় বলবেন ‘The relation of the Individual to the Universe’- নিয়ে তাঁর উপলব্ধি। তিনি রবীন্দ্রনাথ, তিনি বাঙালীর পুজার ছলে ভুলে থাকা ছাতিমতলা, ভুবনডাঙ্গার মাঠ.. তাঁর উচ্চারণ তাঁর উদ্যোগ “We are in harmony with nature” তাঁর উত্তরাধিকার হারালে, পথ হারাবো না কি আমরা ?
আরও পড়ুন – বিদ্ধস্ত প্রজাতন্ত্র