‘গভীর অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর ছলচ্ছল শব্দে জেগে উঠলাম আবার!’
কবি জেগে ওঠার কথা বলেছেন। আমরা তবুও বারবার ঘুমিয়ে পড়ছি। কেন? কারন হয়তো বা জানা। কিন্তু তবুও ঘুমের ঘোর যেন কাটতেই চায়না! ঘুমে বুঁদ হয়ে থাকতে কৌশলী নীরবতাই যেন শ্রেয়!
২৫শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে, মূলত মধ্য-পূর্ব রাজ্য গুলোতে নদী ব্যবহার ও 0নদী সম্পর্কে ধারনা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, সমস্ত নদী ও পরিবেশ আন্দোলনের সংযুক্তি করার লক্ষ্যে ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন’ এর পক্ষে ১০ থেকে ২৫শে সেপ্টেম্বর একটি প্রচার কর্মসূচী গ্ৰহন করা হয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। আর তার অঙ্গ হিসেবে নদী কর্মী,পরিবেশ আন্দোলনের সাথীরা গিয়েছিলেন দ্বারকেশ্বর নদের উৎস মুখে। পুরুলিয়ার পারা ব্লকে দুর্গা সিং ডাঙার অনতিদূর এই দ্বারকেশ্বরের উৎপত্তি। তারপর প্রায় ২২০ কিমি পথ অতিক্রম করে পথেই দামোদর নদীর শাখা মুন্ডেশ্বরী এসে মেশে। এরপর শিলাবতী বা শিলাই নদী মিশে সৃষ্টি করে রুপনারায়ণ নদ। যা কিনা গঙ্গার উপনদী।
দুর্গা সিং ডাঙার কাছ থেকে কম বেশি ছয়শো মিটার মতো নদী গতিপথের বিপরীত দিক হাঁটা। বর্ষা মৌসুমে ঝোপ জঙ্গল, জল কাদা পেরিয়ে পথ চলা। কখনো নদীর চলার পথের এপাশ ওপাশ করে চলা। নদী তো এখানে নদী নয় আলের পাড়ে বয়ে চলা শীর্ণ নালা। কিন্ত নালার বুকেও কোথাও কোথাও চিক করছে বালি।জানান দিচ্ছে তোমারা দ্বারকেশ্বর নদের বুকের উপর দিয়েই হেঁটে চলেছো।শেষের কিছু পথ প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ঝোপের মধ্যে দিয়ে চলা। বার দুয়েক স্থানীয় কয়েকজনের দেখা। কেউ গরু ছাগল চড়াচ্ছেন তো কেউ ক্ষেতে কাজ করছেন। কেউ এই আট পাগলকে আবাক হয়ে দেখছেন। দূর থেকে তো কেউ বা এগিয়ে এসে কথা বলছেন। বললেন বসে এখানে বল তোমাদের গাড়ী কোথায় ছেড়ে এসেছো? তোমাদের বাড়ি কোথায়? মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে এই টিমের তো বাঁধা নেই তাই নরম গালিচার মতন ঘাসে বসে সব উত্তর দেওয়া চললো।টিমের সাথী-বন্ধুরাও প্রশ্ন করে আলাপ করে নিল ছাগল চড়াতে আসা গ্রামবাসীদের সঙ্গে। আর চলার পথে চলছে পরিবেশ, নদী ইত্যাদি নিয়ে নানা কথা। হ্যাঁ, তবে এর সাথে অবশ্যই ছিল আশংকা। কিসের আশংকা? বর্ষায় ঝোপ জঙ্গল, আল বালি, জল কাদামাটি সঙ্গে নানা পোকা মাকড় কিংবা সাপের দেখা পাওয়ার। কিন্তু না, তেমন কিছু হয়নি। হয়তো বা প্রকৃতি আপন করে নিয়েছিল তার সন্তানের। শেষে উপস্থিত হওয়া গেল এক মানুষ সমান এক গর্তের সামনে। জল জমে আছে।গর্তের উপরে আবার সমতল ভূমি এগিয়ে গিয়েছে। যে শীর্ণ ধারা অনুসরণ করে এতক্ষণ আসা হচ্ছে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বোঝা গেল এটাই তবে দ্বারকেশ্বরের শুরু। কথায় বলে শুরুরও শুরু থাকে। তা আর আমরা খুঁজতে গেলাম না আমাদের খোঁজ এই পর্যন্তই ছিল। আমাদের নবীন সাথী ভূমিকা, নদী কর্মী তাপস দাস দার সাথে কথা বলে গুগুল ম্যাপে জায়গাটি চিহ্নিত করলো ‘দ্বারকেশ্বর নদীর উৎস মুখ’কে।
মানিক বাবুর উপন্যাসে বর্ণিত সেই কিশোর চরিত্র গুলোর মতো অতো রোমাঞ্চকর না হলেও প্রায় ছয়শো মিটারের এই যাত্রা ছিল এক অনন্য।