দিনের ঝিম আলোয় পাহাড়ের মেঘে মেঘে বৃষ্টি জমে আছে। কুয়াশায় অরণ্য যেন একবর্ণের ছবি। বৃক্ষের গা বেয়ে, পাতার চিবুক ছুঁয়ে শিশির ঝরে পড়ার শব্দ শূন্যতা না নিরিবিলি ? ঘরে ফিরে যেতে বলছে সে। সে দেশ হারা এক পৌঢ়। সে ঘরে ফিরে যেতে বলছে দেশ হারা আরেক পিতার সন্তানকে। কারণ বৃষ্টি নামবে।
দার্জিলিংয়ের কোলে, প্রকৃতির স্নেহের ফুটফুটে গ্রাম ‘চিত্রে’। মহান চীন বিপ্লবের একটুকরো চিত্র পরে আছে যেখানে। উদ্বাস্তু এক পিতার হাত ধরে বড় হয়ে ওঠা অমিতাভ, সযত্নে ‘চিত্রে’র আরেক উদ্বাস্তু পিতার কথকতা শোনাচ্ছে তার পিতাকে। এক পিতা স্বাধীনতার প্রাপ্তিতে উদ্বাস্তু আরেক পিতা বিপ্লবের প্রাপ্তিতে উদ্বাস্তু। এই দুই পিতার সাঁকো অমিতাভ। চিত্রে র প্রকৃতির ওম ও জীবনের ইতিহাস রূপান্তরের মেঘ ভাসিয়েছে অমিতাভর মনে। জীবনযাপন, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সূক্ষ সংজ্ঞার আবহাওয়ার স্পষ্ট খোঁজে কথক। পাহাড়ের কোমলতায় হাসিখুশি নির্মল নিত্যদিনের মধ্যে হয়তো বড্ড বেমানান এই কাঠিন্যের আলাপ। যেন পাহাড়ের বুক ফুঁড়ে মাইনিংয়ের দগদগে দাগ। ‘পাপোলা’ (তিব্বতী ভাষায় ঠাকুরদা) আর স্বপ্ন দেখেনা তিব্বতের, কিন্তু তিব্বত বারবার ফিরে আসতো তাঁর প্রতিটি স্বপ্নে।
পাপোলা কে কেন্দ্র করে ফিরে আসে সবাই, ফেরে না শুধু তিব্বতের ছোট্ট ‘রংখং’ গ্রামটি। পাপোলা ছিন্নমূলের ইতিহাস বয়ে নিয়ম করে প্রত্যহ মিশে যেতে থাকে চিত্রে র পাহাড়ের শিখরে, সঙ্গী কয়েকটি পোষ্য আর বিস্তীর্ণ মেঘ ছোঁয়া অরণ্য। ওঁর জীবনের প্রতি দৃষ্টি, ধর্মের প্রতি আস্থা, নির্মল পাহাড়ী নদীর ধারার মত জ্ঞানী, যা জীবনের পথ চেনে। পাপোলা বলে যায়, ‘চিন্তা করোনা’। অমিতাভ বলে ওঠে ‘ভালো থেকো’।
‘দ্য ওল্ড ওয়াইস ম্যান‘ অমিতাভ সেনগুপ্ত ও তার সাথীদের নির্মিত মিনিট পঁচিশের এই তথ্যচিত্রকে অনুভব করার চেষ্টায় শব্দগুলির প্রাকৃতিক শোভায় জীবনযাপনের প্রাণময় আনন্দ মিশ্রিত এক বেদনা।